ভারতের অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে কোন প্রভাব পড়বে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের মুখে ভয়াবহ অক্সিজেন সংকটের কারণে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত কয়েকমাসে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অক্সিজেন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনো অক্সিজেন নির্ভর রোগীর সংখ্যা কম থাকায় অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না বলেই তারা আশা করছেন। তবে কোন কারণে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেলে সংকটের আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন তারা।

অক্সিজেনের যোগান ও চাহিদা: 

বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১০০-১২০ টনের মতো অক্সিজেনের দরকার হয়। কিন্তু মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাওয়ার পর সেই চাহিদা দৈনিক ৩০০ টন পর্যন্ত উঠেছিল। তবে সম্প্রতি আবার সেটা আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। এই চাহিদার একটি অংশ দেশেই উৎপাদিত হয়, বাকিটা প্রধানত ভারত থেকে আমদানি হয়।

বাংলাদেশের একটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইসলাম অক্সিজেনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বদর উদ্দিন আল হোসেন বলছেন, ''এক সপ্তাহ আগের তুলনায় এখন বরং বাংলাদেশে অক্সিজেনের চাহিদা বরং কিছুটা কমে এসেছে। আগের সাথে তুলনা করছে বলা যায়, তিন ভাগের একভাবে, মানে আগের মতোই চাহিদা নেমে এসেছে।''

তাই তিনি আশা করছেন, ভারত অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও তাতে বাংলাদেশে কোন সমস্যার তৈরি হবে না। তবে যারা পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর, তাদের কিছুটা জটিলতায় পড়তে হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোয় সেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করে, তারা নিজেরা কিছুটা উৎপাদন করলেও, বড় অংশটি ভারত থেকে আমদানি করে।

জানা গেছে যেসব প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করতো, তারা আপাতত সেখানে সরবরাহ বন্ধ করে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করছে।

ছবি : সংগৃহীত

করোনা সংক্রমণ বাড়লে পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা:

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে লাখ ৪৮ হাজার ৬২৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজারের বেশি মানুষের। অক্সিজেন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে যদি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়, তাহলে অক্সিজেনের চাহিদা আর যোগানের একটা সংকট তৈরি হতে পারে।

কিন্তু তখনো বিকল্প উৎস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করার পথ বাংলাদেশের রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক ও মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলছেন, ''ভারত অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করলেও আমাদের কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তারপরেও আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখছি।" বাংলাদেশে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন তৈরি করে, এ রকম বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা এর মধ্যেই কথা বলতে শুরু করেছি। যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তারা মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করবে।

ইসলাম অক্সিজেনের কর্মকর্তা বদর উদ্দিন আল হোসেনও বলছেন, ''অক্সিজেনের চাহিদা যদি আরও বেড়ে যায়, তখন আমরা শিল্প খাতের অক্সিজেন মেডিকেল খাতে পরিবর্তন করে নিয়ে আসবো।" "আরও যে কয়েকটি কারখানা অলস পড়ে আছে, সেগুলোও চালু করা যায়। আমরা এর মধ্যেই এরকম দুইটি কারখানা চালু করেছি। তারপরেও দরকার হলে চায়না, সিঙ্গাপুর থেকে অক্সিজেন আমদানি করে আনা যাবে।'' ফলে চাহিদা বাড়লেও অক্সিজেনের সংকট তৈরি হবে না বলেই তিনি মনে করছেন।

ভারত থেকে শিক্ষা নিয়ে একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে

তবে ভারতের এই অক্সিজেন সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের আগাম পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হঠাৎ করে কোন সংকটের মুখে না পড়ে, সেজন্য আগে থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নজীর আহমেদ বলছেন, 'ভারতের অবস্থা দেখে বাংলাদেশের এখনই একটি পরিকল্পনা নেয়া উচিত।

"প্রথমে দেখতে হবে আমাদের দৈনিক রোগীর সংখ্যা কতো, তাদের কতজনের অক্সিজেন দরকার হতে পারে, কি পরিমাণ অক্সিজেন লাগবে, আগামী ১৫ দিন বা একমাসে আমাদের কতটা অক্সিজেন লাগবে ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত।''

তিনি বলছেন, সেই সঙ্গে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতেও যেন অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত থাকে, যেখানে অক্সিজেন আছে কিন্তু রোগী কম, সেখানে রোগী বা অক্সিজেনের সমন্বয় নিশ্চিত করা-ইত্যাদি ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025489330291748