ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন জরুরি ছিল না, উদ্দেশ্য বোধগম্য নয় : প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশটির সরকারের উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে না।। আবু ধাবিতে গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সরকার প্রধান আরো বলেন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও, এটি প্রণয়ন জরুরি ছিল না।

মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদপত্রটির অনলাইন সংস্করণে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতে পাড়ি দেওয়া কেউ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে এমন নজির নেই। কিন্তু ভারতে অনেকে সমস্যার মধ্যে আছে । তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই এই সিএএ এবং এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই মনে করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ব্যক্তিগতভাবে তাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে গত বছরের ডিসেম্বরে আইন সংশোধন করেছে ভারত। বিতর্কিত এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে সরব হয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল। চলছে দফায় দফায় বিক্ষোভ। 

সিএএ পাস হওয়ার পরই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নাগরিক তালিকারও বিরোধিতা করছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারতে থাকা মুসলিমরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজবে।

তার আগে আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রণয়ন করা হয়, যাতে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটিতে নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ পড়েন বহু মানুষ। আসামের অনেকের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অনেকে ওই রাজ্যে আবাস গড়েছেন।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক রয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের শুরু মিয়ানমারে। তাদের কাছেই এর সমাধান রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এখন পর্যন্ত দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে চায়নি। ফলে বাংলাদেশের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য ১০ লাখের বেশি শরণার্থীদের বোঝা বহন করতে পারবে না। এই সমস্যা চলতে থাকলে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।

কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনায় পরিবেশবাদীদের শঙ্কা প্রকাশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি করবে না। বাংলাদেশ এখন আড়াই শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করে। এটাকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা সামাল দিতে এমন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু মানুষ বাড়ছে।

অতীতে বাংলাদেশ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল উৎস ছিল গ্যাস। কিন্তু গ্যাস কমে যাচ্ছে। তাই কয়লা, তরল জ্বালানি ও পরমাণু শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুতের চুক্তি করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশে ২ দশমিক ৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। দেশজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩ লাখ সোলার প্যানেল। এছাড়া ছাই বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।   

বিশাল জনসংখ্যার দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কীভাবে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন, তাও গালফ নিউজকে তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024120807647705