ভারসাম্যহীন আলমাস ১৩ বছর শি*কলব*ন্দি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মেহেরপুর |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, মেহেরপুর : মেধাবী ছাত্র হিসেবে গ্রামজুড়ে সবাই আলমাসকে চিনত। বিদ্যালয়ের ছিল ফার্স্ট বয়। শিক্ষকের খাতা দেখার ভুলে দশম শ্রেণিতে রোল দ্বিতীয় হয়, যা মেনে নিতে পারেনি সে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক মানসিক ভারসাম্য হারায় আলমাস। এরপর থেকে ১৩ বছর শিকলবন্দি জীবন পার করছে সে। মেহেরপুরের গাংনী তেঁতুলবাড়িয়ার করমদী গ্রামের আলাউদ্দিন আলীর ছেলে আলমাস হোসেন (২৭)। ছেলের সুস্থতার জন্য চিকিৎসায় ভিটেমাটি সব খুইয়ে এখন নিঃস্ব পরিবারটির অভিযোগ, শিক্ষকের সামান্য ভুলে তাদের মেধাবী ছেলের আজ এ অবস্থা। সে কখনো হাসে, কখনো কান্না করে, কখনো বই পড়ে কিংবা লেখালেখি করে। আবার কখনো ভাবনার জগতে নিষ্পলক চোখে নির্ঘুম রাত কাটায়। কখনো চিৎকার করে কাউকে মারতে উদ্যত হয়। তখন হাতের কাছে যা পায় তা-ই ভাঙচুর করে। তাই ১৩ বছর একটি ঘরে শিকলবন্দি একসময়ের মেধাবী আলমাস এখন পরিবারের বোঝা হয়ে পড়েছে।

পিতা আলাউদ্দিন আলী জানান, আলমাস করমদী মাধ্যমিক স্কুলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছিল। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের সময় শিক্ষকের খাতা দেখার ভুলে সে দ্বিতীয় স্থান পায়। পরে খাতা চ্যালেঞ্জে ২০ নম্বর যুক্ত হলে আলমাস আবার প্রথম হয়। কিন্তু শিক্ষকের ওই ভুল রেজাল্ট সে মেনে নিতে পারেনি। মানসিকভাবে আঘাত পেয়ে সে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ওই সময় সে ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকত। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলত না। ওই অবস্থায় পরিবারের চাপে এসএসসিতে অংশ নেয়। বিনা প্রস্তুতির ওই পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৭০ পেয়ে উত্তীর্ণ হলে গ্রামের কলেজে ভর্তি করানো হয়। একপর্যায়ে পড়াশোনা থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে। তখন জিজ্ঞেস করলে শুধু বলত, ‘এ দেশে শিক্ষকরা ভুল করে। আর পড়ালেখা করব না।’

ছবি: সংগৃহীত

মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘শিক্ষকের ভুলে ওই দিন প্রথম হওয়া তন্ময় বিদ্যালয়ে সবাইকে মিষ্টিমুখ করায়। এটা আলমাসের সহ্য হয়নি। পরে খাতা দেখে আলমাস প্রথম হলেও সেই ফলাফল আলমাসকে আনন্দের চেয়ে কষ্ট দিয়েছে বেশি। যে কষ্ট তার শিক্ষাজীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সন্তানের চিকিৎসায় ভিটেমাটি সব হারিয়েছি। এখন অন্যের জমিতে কুঁড়েঘরে বাস করছি। সময়মতো ওষুধ না খেলে ছেলের পাগলামি বেড়ে যায়। তাই খেয়ে না খেয়ে তার ওষুধের ব্যবস্থা করতে হয়।’

স্থানীয়রা জানান, আলমাস একটু সুস্থ হলে মাঝেমধ্যে শিকলমুক্ত করে ঘোরানো হয়। কিন্তু বই হাতে শিক্ষার্থীদের দেখলে প্রচ- ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। তাই ঘরে শিকলবন্দি থাকতে হয় জীবনের বেশি সময়।

করমদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আলমাস পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিল। শিক্ষক ভুল করে খাতায় কম নম্বর দিলেও পরে ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু মানসিক সেই ধাক্কা কাটিয়ে আলমাস আর ঠিক হতে পারেনি। অতিরিক্ত পড়ার কারণে এমনটা হতে পারে।’

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবু হাসান মো. ওয়াহেদ রানা বলেন, ‘অতিরিক্ত পড়াশোনা বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনো আঘাত পেলে ব্রেন অ্যাবনরমাল হয়ে পড়ে। এসব রোগীর সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহারসহ তাদের প্রতি সহনশীল হতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরশাদ আলী বলেন, ‘ইতিপূর্বে আলমাসকে ঢাকার একটি মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রের লোকজন এসে নিয়ে যায়। পরে তারা ফেরত দেয়। সমাজসেবা থেকে আলমাস ও তার পরিবারকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029089450836182