স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজে। সোমবার নানা আয়োজনে ও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়।
দিনের অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে ছিলো সূর্যোদয়লগ্নে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ স্মারক ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শেখ রাসেল দেয়ালিকায় দেয়াল পত্রিকা উন্মোচন, বৃক্ষরোপন। এছাড়াও কলেজের স্বাধীনতা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা, দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এবং কবিতা আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনানহ শেষ পর্বে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
শোক দিবসের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আতিয়া খন্দকার। আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্ট : একটি দার্শনিক পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: বজলুর রহমান রফিক। প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সমাজকল্যাণ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তামান্না সুলতানা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মোহন। অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কমিটির আহ্বায়ক নূপুর দত্ত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। ১৫ আগস্ট যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ওপর ঘাতকদের বুলেট ছুটে আসবে তা কোনো কল্পকাহিনীতেও ভাবা সম্ভব নয়। আজ এত বছর পরও তা ভাবা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। শেখ মুজিবের প্রেরণা, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা বাংলাদেশের সব সংকটের রক্ষাকবচ হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন অনেক আগেই। বলতে গেলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার গোড়া থেকেই। আওয়ামী লীগের অন্যতম স্থপতিরূপে তরুণ শেখ মুজিবের চিন্তা ও কর্মের ধারাবাহিক বিশ্নেষণের মধ্য দিয়েই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে জাতিসত্তায় রূপান্তর করে ‘বাংলাদেশ’ নামক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার নেতৃত্বের একমাত্র কৃতিত্ব বাংলা ও বাঙালির প্রবাদ পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ কারণেই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।
আলোচকরা বলেন, প্রিয় পিতা, ঘাতক জল্লাদরা আপনাকে হত্যা করেছে ঠিকই, কিন্তু বাঙালি জাতির হৃদয়ের আসন থেকে আপনাকে কি সরাতে পেরেছে? পারেনি। আপনি অমর-অক্ষয়-অবিনশ্বর। ছড়া-কবিতা-গান, শিল্প-কাব্য-সাহিত্য, চিন্তা-চেতনা-আদর্শ, পরিবার-সমাজ এমনকি রাষ্ট্র- বঙ্গবন্ধু, কোথায় নেই আপনি? ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যতদিন, যতবার লেখা হবে, পড়া হবে, ততদিন, ততবার বঙ্গবন্ধু বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির মুহূর্ত এবং সেই সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর অনন্য ভূমিকার কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীনতা আমাদের রক্তে কেনা অর্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহামানবের জন্ম এ মাটিতে হয়েছিল বলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমাদের এই অর্জনকে অর্থবহ করতে হবে।