ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়।
পরে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেখ রাসেল দেয়ালিকায় দেয়াল পত্রিকা উন্মোচন। এছাড়া কলেজের স্বাধীনতা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভার। অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কবিতা আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাসানটেক সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মামুন রেজা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আতিয়া খন্দকার।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাঙালি জাতির জন্য এ দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার, অন্যদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ছিলো ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও শাসকগোষ্ঠির প্রভুসুলভ মনোভাবের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং ভাষার ভিত্তিতে বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায় এবং এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে যে আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছিলো, তার মাধ্যমে বাঙালি সমাজের মধ্যে এক নতুন চেতনা ও মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন ‘মায়ের ভাষার’ মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পায় নব প্রেরণা। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে সংযোজিত হয় নতুন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।