রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার খাতা টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরামের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, করোনাজনিত কারণে বন্ধ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গোপনে তড়িঘড়ি করে নেওয়া শাখাপ্রধান নিয়োগ করাসহ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম করা হয়েছে। তারা এসব অনিয়মের জন্য অধ্যক্ষসহ সংশ্নিষ্ট শিক্ষক প্রতিনিধির শাস্তি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর ভিকারুননিসায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার (রানা) এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ সুজন অভিভাবকদের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে এ প্রসঙ্গে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া ও গভর্নিং বডির সদস্য শিক্ষক প্রতিনিধি (টিআর) ফাতেমা জোহরা হকের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানানো হয়। অভিযোগ আমলে নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) একেএম মাসুদুজ্জামানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিভাবকদের অভিযোগ, গত শনিবার (৭ নভেম্বর) ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। ওই পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময় দুইজন প্রার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে শিক্ষক প্রতিনিধি ফাতেমা জোহরা হক এক প্রার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে প্রমাণ পান গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মাজহারুল ইসলাম। পরের দিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন গভর্নিং বডির সভায় ভাইভা পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়।\হভিকারুননিসার অভিভাবক ফোরামের সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার (রানা) এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ সুজন জানান, গভর্নিং বডির সভাপতির নির্দেশে মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত প্রার্থীদের যাতায়াত খরচ দিয়ে বিদায়\হকরা হয়। এরপর গভর্নিং বডির সভায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
এদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে টেম্পারিংয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত করছে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত কমিটি। ১০ নভেম্বর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এ কে এম মাসুদুজ্জামানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অধ্যক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে নিয়োগ পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।\হঅধ্যক্ষকে দেওয়া চিঠিতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মাজহারুল ইসলাম, গভর্নিং বডির সদস্য এ বি এম মনিরুজ্জামান (অভিভাবক প্রতিনিধি), মুর্শিদা আখতার (অভিভাবক প্রতিনিধি), ওহেদুজ্জামান মন্টু (অভিভাবক প্রতিনিধি), গোলাম বেনজীর (অভিভাবক প্রতিনিধি), অ্যাডভোকেট রীনা পারভিন (সংরক্ষিত অভিভাবক প্রতিনিধি) এবং অভিযুক্ত শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হককে (শিক্ষক প্রতিনিধি) উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সে অনুযায়ী গতকাল এ তদন্ত কার্যক্রম করা হয়।
এসব বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া রেজওয়ানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে তিনি গণমাধ্যমে কোনো কথা বলবেন না।