ভিকারুননিসায় নির্বাচন : সেই ৭ প্রার্থীর আপিল খারিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত আগের গভর্নিং বডির সদস্যদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সোমবার সর্বশেষ শুনানিশেষে খারিজ করে দেন। সদ্য বিদায়ী গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ থাকায় আগামী ২৫ অক্টোবরের নির্বাচনে ৭ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালার ১১ এ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগের গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

প্রবিধানমালায় এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিরোধী বা সুনাম নষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন বা কোনভাবে সহায়তা করেন তাহলে তিনি গভর্নিং বডি বা ম্যনেজিং কমিটির সদস্য হতে পারবেন না।  

প্রার্থিতা ফিরে পেতে তারা প্রথমে ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর ও পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে, উচ্চ আদালত ও জেলা প্রশাসন উভয় জায়গা থেকেই আপিল খরিজ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তারা হলেন, দাঁতের ডাক্তার মজিবুর রহমান হাওলাদার, ড. ইউনুস আলী আকন্দ, ড. তাজুল ইসলাম, তিন্না খুরশিদ জাহান মালা, ড. ফারহানা খানম, আগের কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মুসতারি সুলতানা, মাহবুব হক মিঠু। আগের কমিটির সবার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। তারা আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। 

ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, গত ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা জামান প্রবিধানমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের সদস্য হবার অযোগ্যতার বিষয়ে তথ্য চেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চিঠি পাঠায়। ৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা একটি তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানটিতে আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত ৪৪৩ জন ছাত্রী ভর্তি করানো বিষয়ে গভর্নিং বডি ও সাবেক অধ্যক্ষকে দায়ি করা হয়েছে। এছাড়া গণিত বিষয়ের ২জন প্রভাষক নিয়োগ করার কথা থাকলেও ৩ জন প্রভাষক নিয়োগ করা হয়েছে। যার জন্য গভর্নিং বডিকে দায়ি করা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছে যার জন্য গভর্নিং বডিকে দায়ি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জেলা প্রশাসক দপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এসব অনিয়মের ফলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব অপরাধের জন্য আগের গভর্নি বডিকে দায়ী করা হয়েছে। তাই আগের গভর্নিং বডির সদস্যরা সে দায় এড়াতে পারেন না। তাই, আগের গভর্নিং বডির সদস্যদের মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত ন্যয়সংগত ও আইননানুগ। তাই প্রার্থিতা ফিরে পেতে গভর্নিং বডির সদস্যের করা আপিল খারিজ করা হয়েছে।    

প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা দায়ের করা আপিল খরিজের বিষয়টি সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি সাথে সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে গভর্নিংবডির অভিভাবক প্রতিনিধি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সুজন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানকে সাধুবাদ জানাই। ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত আগের কমিটির অভিযুক্তদের প্রার্থিতা বাতিলে করায় প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে। আর নতুন করে তারা কোন অনিয়ম বা শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করার সুযোগ পাবে না। 
 
জানা গেছে, আগামী ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসে গভর্নিং বডি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর গভর্নিং বডির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। 

গত ১, ২ ও ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়। এসময়ের মধ্যেই প্রার্থিদের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আগামী ৯ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

জানা গেছে, গত ৩ মে ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে ২৫ দিন প্রতিষ্ঠানটির কোনো গভর্নিং বডি ছিল না। পরে গত ২৮ মে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। গভর্নিং বডির নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে অ্যাডহক কমিটি। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রিজাইডিং অফিসারও নিয়োগ দেয় ঢাকার জেলা প্রশাসক।

প্রতিষ্ঠানটির আগের গভর্নিং বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ খেয়ে অযোগ্য প্রার্থীকে অধ্যক্ষ পদে বসানোর চেষ্টা, টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত সাড়ে ৪ শ শিক্ষার্থী ভর্তি, অবৈধভাবে ১৪জন প্রভাষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে সেসব অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব অভিযোগে আগের গভর্নিং বডি ও সাবেক অধ্যক্ষকে দায়ি করা হয়।   


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028178691864014