পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ভিসিদের অদক্ষতায় সংকট পিছু ছাড়ে না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। আবরার হত্যার বিচার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আবরার হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যাপারে সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়েছে। তবে উপাচার্য দক্ষ হলে বুয়েটে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। হয়তো আন্দোলনও এত দূর গড়াত না। শনিবার (৩০ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আবরারের জানাজা বুয়েট ক্যাম্পাসে হওয়ার পরও উপাচার্য তাতে অংশ নেননি। এমনকি ঘটনাটি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হলেও উপাচার্যের দেখা মেলে দুই দিন পর। অনেকের মতে, উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম দক্ষ হলে হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতেন। তাহলে শিক্ষার্থীদের আর বড় আন্দোলনে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না।

সম্প্রতি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল মূলত উপাচার্যের অদক্ষতা ঘিরেই। জানা যায়, বশেমুরবিপ্রবির ছাত্রী ও একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমাতুজ জিনিয়ার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আন্দোলনের সূত্রপাত। ফেসবুকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী’ লেখায় শুধু ওই ছাত্রীকে বহিষ্কার করেই ক্ষান্ত হননি উপাচার্য, তাঁর বাবা ও পরিবার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওই ঘটনার জের ধরে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলনে তখন জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করেন ভিসি। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলায় তাঁর ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ আছে। মূলত উপাচার্য নিজেকে সব সময় বড় ক্ষমতাধর ভাবতেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পদস্থ কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিসহ নানা কাজে সহায়তা করতেন বলে অন্য কাউকে পাত্তা দিতেন না।

আন্দোলনের মুখে বন্ধ আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও আন্দোলনের সূত্রপাত উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ঘিরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান নিজের ইচ্ছামতো বাস্তবায়নে তৎপর উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভ-ক্ষতির দিকে বা অন্য কারো অভিমত গ্রাহ্য করার কোনো লক্ষণই নেই তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও মনে করেন, উপাচার্য দক্ষ হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই একটি সর্বসম্মত মাস্টারপ্ল্যান করতে পারতেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক সম্প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন না করেই বিদায় নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছিলেন তিনি। এর পরই তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে। একজন দক্ষ ভিসির পক্ষে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ওই ধরনের মন্তব্য করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

কয়েকজন শিক্ষাবিদ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আর অভিভাবকের দায়িত্ব সব শিক্ষার্থীকে আগলে রাখা। কিন্তু বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উল্টো স্বেচ্ছাচারিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নানা বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছেন। অনেক উপাচার্যই নিয়ম-নীতির ধার ধারেন না। শিক্ষার্থীরাও তাঁদের কাছ থেকে খুব একটা ভালো ব্যবহার পান না। এমনকি ক্যাম্পাসে অবস্থান করার কথা থাকলেও কেউ কেউ তা মানছেন না। তাঁরা ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস খুলে সেখানে বসেই বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন। নিয়োগ বাণিজ্য, কেনাকাটায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক উপাচার্য।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানবলেন, ‘উপাচার্য মূলত একজন শিক্ষক। তাঁর দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রাখা। তাই উপাচার্যদের প্রশাসনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং একাডেমিক যোগ্যতা থাকতে হবে। কারণ একজন উপাচার্য শুধু তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, দেশ-বিদেশেও তিনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন। উপাচার্যদের মনে রাখতে হবে—তাঁদের চলার পথ সব সময় মসৃণ হবে না। কোনো মহল যেন কোনো কারণে অপসুযোগ না নিতে পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।’

বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সদ্যোবিদায় নেওয়া উপাচার্যের নানা অনিয়মের তথ্য রয়েছে ইউজিসিতে। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে তদন্তও চলমান। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যোবিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর এস এম ইমামুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মো. আবদুস সাত্তার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মু. আবুল কাশেম এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়েই তদন্ত চলমান আছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারি। ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তবে ইউজিসিকে আরো ক্ষমতায়িত করা হলে অনেক বেশি ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041818618774414