লাগাতার বিতর্ক ও নানামুখী সমালোচনার মুখে অবশেষে নতুন শিক্ষাক্রমের ভুলে ভরা সেই দুই পাঠ্যবই প্রত্যাহার করেছে সরকার। আরও তিনটি বই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুক্রবার নতুন দুই পাঠ্যবই প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। একইসঙ্গে তিনটি বই সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছে বোর্ড। সরকারের উচ্চপার্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বই দুইটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার করা বইগুলো হলো, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ ও ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ।
আর যে তিনটি পাঠ্যবই সংশোধনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা হলো, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুশীলনী পাঠ, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুশীলনী পাঠ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ।
শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এনসিটিবি জানিয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ পাঠ্যবই দুইটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হলো। এ শ্রেণি দুইটির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুশীলনী পাঠ ও ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ পাঠ্যপুস্তকের কিছু অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। পাঠ্যপুস্তকগুলোর অন্যান্য সব অধ্যায়ের পাঠদান অব্যাহত থাকবে। সংশোধনীগুলো শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে।
জানা গেছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির এ দুটি ইতিহাসের বইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামে ভুল করা হয়েছিলো। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। এছাড়া আরও ১৮টি অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ছেলেবেলার ‘মুজিব’ শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। পদটি আজও দেশের সব জেলা জজ আদালতে বহাল আছে।
এছাড়া ওই বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় ‘ভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে আন্দোলনের বর্ণনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়নি। একই বইয়ের তিন জায়গায় কোথাও বাঙালি, হ্রস্ব ইকার দিয়ে, কোথাও বাঙালী দীর্ঘ ঈ কার দিয়ে, আবার কোথাও লেখা হয়েছে বাঙ্গালি।
এদিকে, ৭৭ পৃষ্ঠায় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, কর্নেল ওসমানিকে জেনারেল পদ দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়। শুদ্ধ হচ্ছে, তিনি কর্নেল পদে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক। আর দেশ হানাদারমুক্ত হবার পর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
এছাড়া সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় ‘রাজনৈতিক সংযোগ’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, তোমরা তো জানো ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে গ্রেফতার বরণ করার আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম যেন এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেন। বইটিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার বরণ করেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হয়েছেন। এই শব্দটি প্রথম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন খালেদা জিয়া!
জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ নিয়ে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ সভাপতি মাওলানা হুশামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলীর নেতৃত্বে একটি দল সাক্ষাৎ করেন। সব মিলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই পাঠ্যবইগুলোর ইস্যুতে বেশ চাপে ছিলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। ৩১ জানুয়ারি ওই কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কমিটি কাজ শুরুর আগেই পাঠ্যবই প্রত্যাহার আর সংশোধনের ঘোষণা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটল।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠনের চাওয়া অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল।