ভুলে ভরা রাবির সমাবর্তনে দেয়া সনদ

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাবির সমাবর্তনে দেয়া সনদ ভুলে ভরা। কারও নামের বানান ভুল। কারও নামও পরিবর্তন হয়ে গেছে। কারও বিভাগের নাম বদল হয়ে গেছে। অনেকের হলের নামের বানান মিলছে না। কারও অনার্সের নামের সঙ্গে মাস্টার্সের নামের মিল নেই। কারও সনদে ফলাফল ঠিকভাবে লেখা নেই। এমন ভুলে ভরা সনদপত্র পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাবর্তনে অশংগ্রহণকারী অনেকে গ্র্যাজুয়েট। ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ মাস্টার্স করেছেন আবদুল কাদের। অনার্সে চার বছরের রেজাল্ট একসঙ্গে করে ফলাফল দেয়া হয়। এই মোট ফলাফলকে বলে সিজিপিএ। মাস্টার্সে শুধু একটি বর্ষের ফলাফল দেয়া হয় বলে লেখা হয় জিপিএ। তবে কাদেরের মাস্টার্সের মূল সনদপত্রে জিপিএ’র জায়গায় লেখা হয়েছে সিজিপিএ। কাদেরের অভিযোগ, যারা সার্টিফিকেট লিখেছেন, সিজিপিএ ও জিপিএ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। এসব সনদের সঠিকতা চেক করার কাজে যারা ছিলেন তারাও এ বিষয়ে অজ্ঞ বলে এমন গুরুতর ভুল তাদের চোখে পড়েনি। রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সানাউল হকের নামের বানান ইংরেজিতে Sanaul Hoque. তবে সমাবর্তন উপলক্ষে মাস্টার্সের মূল সার্টিফিকেটে Hoque বানান লেখা হয়েছে Howue.

  

একই বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের নামের প্রথম ভাগের বানান Mehadi হলেও সার্টিফিকেটে নাম এসেছে Mehedi। শুধু সানাউল বা মেহেদী হাসানই নন, এই বিভাগের আরও ১০ শিক্ষার্থীকে সমাবর্তনে দেয়া সার্টিফিকেটে অনেক ভুল রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হানুল রানার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার হলের নামের বানানে ভুল ছিল। পরে তিনি সংশোধন করেন। সমাবর্তনে দেয়া সনদে আগের ভুলই রয়ে গেছে। এমন ভুল কাম্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি। ভুল হয়েছে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর নামে। সার্টিফিকেটে তার নাম পুরোটাই বদল হয়ে গেছে। ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম পারভেজ ২০১৬ সালে এমএসসি পাস করেন। পরবর্তী বছরে মান উন্নয়ন পরীক্ষা দিলে ফলাফল পরিবর্তন হয়। কিন্তু এবারের সমাবর্তনে তাকে যে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে তাতে মান উন্নয়ন পরীক্ষার আগের ফলই উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার এক কর্মকর্তার মেয়ে ফিন্যান্স বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করে এবারের সমাবর্তনে অংশ নেন। তবে সনদপত্রে লেখা হয়েছে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ। আগে রাবিতে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ নামে একটি বিভাগ ছিল। কয়েক বছর আগে তা ভেঙে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং নামের দুটো আলাদা বিভাগ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদের মতে, এসব ভুল দায়িত্বহীনতার পরিচয়। তিনি বলেন, সমাবর্তনে যে সনদ দেয়া হয় তা আগের সব রেকর্ডপত্র দেখে নির্ভুলভাবে তৈরি করার কথা। পূর্বে যদি ভুল না থাকে তাহলে এখন তো ভুল হওয়ার কথা নয়।

সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের সার্টিফিকেট দিয়ে যেখানে সম্মান দেয়ার কথা সেখানে এখন ভুলে ভরা সার্টিফিকেট পেয়ে অসম্মানিত করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এটা কারও কাম্য নয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সমাবর্তনে দেয়া সনদপত্রে যেসব ভুল হয়েছে সেসব ভুল সংশোধন করতে অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হবে তাদের। ভুল সংশোধন করতে গেলে সময় নষ্ট হবে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে এ ধরনের কাজের জন্য সময় বের করা কঠিন। তবে প্রশাসনের উচিত কোনো প্রকার ফি না নিয়েই এসব ভুল সংশোধন করা।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বাবুল ইসলাম বলেন, ‘গেজেটে ভুল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ভুল হয়েছে। যেহেতু ভুল হয়েছে সেহেতু ভুক্তভোগীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে এলে সেটি সংশোধনের সুযোগ পাবেন।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006619930267334