ভুয়া কাগজে নিয়োগ পেয়েছেন প্রাথমিকের ১১ শিক্ষক

সিলেট প্রতিনিধি |

ভুয়া কাগজ দেখিয়ে সিলেটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রাথমিকের ১১ শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে নিয়োগপত্র পাওয়া ১১ জনের নাগরিকত্ব সনদ জাল বলে প্রমাণ মিলেছে। সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি সনদ জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ায়  শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারেননি ১১ প্রার্থী। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র।

গত বছরের ৭ অক্টোবর এ নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফল প্রকাশ করে ওই দিনই সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়। এরপর ওই দিন বিকালে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক জাল নাগরিকত্ব সনদের বিষয়ে অভিযোগ দিলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান তা তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দেয়া হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়।

যে ১১ জনের বিরুদ্ধে জাল নাগরিকত্ব সনদ ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে তারা হলেন- বিশ্বনাথের অখি বনিক, বিশ্বনাথ পুরান বাজারের সঞ্জয় তালুকদার, একই এলাকার শায়ান চন্দ্র তালুকদার, পুরানগাঁও গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার শান্তা ইসলাম মুনিয়া, ফুলবাড়ির পূর্বপাড়ার রুমানা আক্তার, বারকোট গ্রামের চুমকি চক্রবর্তী, হেতিমগঞ্জ গ্রামের মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান, গোয়াইনঘাটের গোয়াইন গ্রামের রাজমিন নাহার রুবা, ছৈলাখাল অষ্টম খণ্ড গ্রামের মিজানুর রহমান ও জাহিদুল ইসলাম।

এদিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জেলা পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত হয়েছে বিধি অনুযায়ী তার কাছেই প্রতিবেদন জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দিলে বিষয়টি এখানেই নিষ্পত্তি হতো। কারণ, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সভাপতি জেলা প্রশাসক। প্রয়োজন মনে করলে তিনিই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কিংবা অধিদপ্তরে পাঠাবেন।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুমেরী জামানের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লা সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মুনতাকিমকে দিয়ে তদন্ত করান। এরপর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিলে জেলা প্রশাসক গ্রহণ না করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নিজে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর মো. ওবায়দুল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেননি। এক পর্যায়ে তিনি নেত্রকোনায় বদলি হয়ে যান।

এরপর দুর্নীতিবাজ কয়েকজন শিক্ষক নেতা প্রতিবেদনটি ধামচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কিন্তু প্রতিবেদন আটকাতে না পারায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে গেলে অনেকেই কমিটির সামনে হাজির হননি। কেউ কেউ আত্মগোপনে থেকে চাকরি করবেন না বলে জানিয়ে কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন। কেউ লোক মারফতে খবর পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. বায়েজিদ খান বলেন, আমার আগের শিক্ষা অফিসার বিষয়টি তদন্ত করে মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দিয়ে নির্দেশনা চেয়েছেন। অদ্যাবধি কোনো নির্দেশনা আসেনি। প্রতিবেদন ডিসির কাছে না দিয়ে ডিজির কাছে কেন দেয়া হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আমি রিপোর্ট দিইনি তাই আগের ডিপিও এটি ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনায় বদলি হওয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়দুল্লা বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের কাছেই রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি দায়িত্ব নিতে চাননি। পরে জেলা প্রশাসকের পরামর্শ অনুযায়ীই মহাপরিচালকের কাছে রিপোর্ট দিয়েছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027968883514404