প্রধান শিক্ষিকার মারধরে শিশু শিক্ষার্থীর মাথায় রক্তক্ষরণ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি |

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১৮ নম্বর দক্ষিণ মহিষার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার বেধড়ক মারধরে মিনহাজ নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত ঐ শিশুটিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন চিকিত্সা প্রদানের পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঐ শিশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি বিছানায় শুয়ে মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সহপাঠী ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যালয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে খেলা করছিল মিনহাজ। এ সময় দুই বন্ধুর দুষ্টুমিতে প্লাস্টিকের পড়ার টেবিলটি ভেঙে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারী শিক্ষিকা ডলি বেগম প্রধান শিক্ষিকার কাছে মৌখিক অভিযোগ দেন। প্রধান শিক্ষিকা ঐ শিশুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মিনহাজ টেবিল ভাঙার কথা অস্বীকার করলে প্রধান শিক্ষিকা লুত্ফা খানম (লতা) প্রচণ্ড রেগে যান এবং শিশুটির মুখ চেপে ধরে তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মিনহাজ। ঘটনার সময় মিনহাজের মা সামনে থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষিকার ভয়ে তিনি  তাকে কিছু না বলে সন্তানকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। কিছুক্ষণ পরই মিনহাজের জ্বর ওঠে এবং খিচুনি শুরু হয়। তাকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক মিনহাজকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে রেফার করেন। তিন দিন শরীয়তপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সার পর ডাক্তার জানান, মিনহাজের মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। উন্নত চিকিত্সার জন্য তিনি শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। মিনহাজের বাবা রাজু সরদার বলেন, ‘আমার ভালো ছেলেটাকে মারধর করেছে লুত্ফা মেডাম। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার।’ তিনি আরো বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মহিষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অরুন হাওলাদারকে নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা আমার কাছে আসেন এবং ঘটনার জন্য ক্ষমা চান। চিকিত্সা বাবদ ১০ হাজার টাকা দেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। পরে মিনহাজের চিকিত্সার সব প্রেসক্রিপশন নিয়ে নেন চেয়ারম্যান।

আহত শিশুর মা অভিযোগ করে বলেন, ‘অমানবিকভাবে ছেলেটিকে আমার সামনেই লতা ম্যাডাম মারধর করেছেন। আমরা গরিব মানুষ কার কাছে বিচার চাইব? এখন ডাক্তার বলছে মিনহাজকে ঢাকা নিতে হবে। আমরা গরিব মানুষ কীভাবে চিকিত্সা করাই।’

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষিকা লুত্ফা খানমকে (লতা) স্কুলে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘এইবারের মতো আমাকে মাফ করে দেন। ভবিষ্যতে আর কখনো আমি এরকম করব না।’ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মহিষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অরুন হাওলাদারের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিত্সক রাজেস মজুমদার জানান, শিশুটির শরীর ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে। ভেদরগঞ্জ থানার ওসি বাহালুল খান বাহার জানান, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ সোবাহান মুন্সী বলেন, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান বন্যায় ১২শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি - dainik shiksha বন্যায় ১২শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ - dainik shiksha কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে - dainik shiksha শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029070377349854