দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব ভিক্ষুক আবুল মুনসুর। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার জুয়েল আহমেদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। ভিক্ষুক আবুল মনসুরসহ এই আসনে মোট ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ইউএনও জুয়েল আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশি যেকোনো ব্যক্তি মনোনয়নপত্র কিনতে চাইলে আমি দিতে বাধ্য। তেমনি জমা দিতে চাইলেও আমি নিতে বাধ্য। কারণ এটি তার গণ়তান্ত্রিক অধিকার। দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করা আবুল মুনসুর গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ত্রিশাল উপজেলার বইলর থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যেও মনোনয়নপত্র জমা দিলেন তিনি।
আবুল মুনসুরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বইলর ইউনিয়নের বড়পুকুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা। অল্প বয়সেই দিনমজুরের কাজে নেমেছিলেন তিনি। বিয়ের পর অন্যের রিকশা ভাড়ায় চালিয়ে রোজগারের পথ বেছে নেন। ১০-১২ বছর পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। আবুল মুনসুরের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে কর্মজীবী। এরপরও ১৪ বছর ধরে ভিক্ষা করেই চলছে তার সংসার। কিন্তু সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা জোটেনি কপালে। এ ক্ষোভ থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন জাগে বৃদ্ধের মনে।
স্বপ্নপূরণে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বইলর থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন ভিক্ষুক আবুল মুনসুর। তখন পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চশমা প্রতীক নিয়ে ৩৭৭ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে থেকে আলোচনায় আসেন তিনি।
স্থানীয়রা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রত্যেক চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন নির্বাচনে। অথচ কোনো খরচ ছাড়াই মুনসুর পেয়েছিলেন ৩৭৭ ভোট।
গতবারের মতো এবারও ভোর থেকে রাত অব্দি পাড়া মহল্লা, হাটবাজারে একাই জনগণের কাছে ভোট চাইছেন তিনি। অনেকে এটিকে পাগলামি বললেও কেউ কেউ নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ বলে মনে করছেন এবং তাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
আবুল মুনসুর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ইউপি নির্বাচনে অনেক ভোটার সমর্থন দিয়েছিলেন। সাড়া দিয়ে পাশে ছিলেন। নিরীহ প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।