মতিঝিল আইডিয়ালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করা অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীর চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়া মো. মিজানুর রহমানও। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে এন্ড কলেজের বিভিন্ন শাখায় উন্নয়ন কাজে গভর্নিং বডির কোনো রেজ্যুলেশন ছাড়া নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে কাজ করা ও কমিশন নেওয়া, প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে কম্পিউটার না কিনে টাকা আত্মসাৎ এবং টাকার বিনিময়ে ২০ শিক্ষার্থীকে বদলি ও অবৈধ ভর্তির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। ডিআইএর প্রতিবেদনটির কপি দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর হাতে  এসেছে। 

মো. মিজানুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

এতে দেখা যায়, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে একবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মো. মিজানুর রহমান। তখন তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের টাকায় ১০টি কম্পিউটার না কিনে সেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। 

 ডিআইএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র সর্বনিম্ন বিবেচিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে কম্পিউটার সরবরাহের কাজ পায় ফ্লোরা লিমিটেড। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ আগস্ট ফ্লোরা লিমিটেড ১০টি কম্পিউটার সরবরাহ করে, যা ওই তারিখের রেজ্যুলেশনে উল্লেখ রয়েছে। তবে রেজ্যুলেশনের শেষাংশে লেখা রয়েছে, ‘পরবর্তী সময়ে আরও ১০টি কম্পিউটার পাওয়া গেল তাহার বিল পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’

ডিআইএ বলছে, ১০টি কম্পিউটার বাবদ ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকা চেকের মাধ্যমে শোধ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার বুঝে পায়নি। আবার শেষের দিকের লাইনটি রেজ্যুলেশন তৈরির পর সংযুক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি লেখা হয়েছে বলে ডিআইএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিআইএর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১০টি কম্পিউটার কোন তারিখে সরবরাহ করা হয়েছে বা প্রতিষ্ঠান বুঝে পেয়েছে, এমন কোনো রেকর্ড পরিদর্শনের সময় উপস্থাপন করা হয়নি। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শুধু টাকা আত্মসাতই শেষ নয়, ভ্যাট ও আয়কর না দেওয়ায় ১ লাখ ২৬ হাজার ২৪৪ টাকার ক্ষতি হয়েছে সরকারেরও। এটি ফেরত দিতে বলা হয়েছিল মিজানুর রহমানকে। কিন্তু তিনি কোনো টাকা ফেরত দেননি।

নিয়মানুযায়ী একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার কাজের অনুমতি দিতে পারেন। সেজন্য গভর্নিং বডির অনুমতি লাগবে।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখায় ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। এটি নিয়মবহির্ভূত বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, কোনো রেজ্যুলেশন ছাড়া, গভর্নিং বডির অনুমতি ছাড়া নিজের পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেখান থেকে কমিশন নিচ্ছেন। 

এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও মিজানুর রহমান বর্তমানে স্কুলে যেসব কাজ করাচ্ছেন, সেগুলো হলো বনশ্রী শাখায় মাঠ ভরাটে ১০ লাখ টাকার কাজ, বনশ্রী কলেজ শাখায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে (সেফ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পেয়েছে, এটি প্রাথমিক শাখার অভিভাবক প্রতিনিধি সাহাদাৎ ঢালীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান) ৭ লাখ টাকা, অডিও সিস্টেম স্থাপনে ৩ লাখ, মুগদা শাখায় বাথরুম নির্মাণে ৫ লাখ, মতিঝিল স্কুল শাখায় গ্রিলের কাজে ৩ লাখ, মতিঝিল স্কুলে বাথরুম স্থাপনে ১০ লাখ, মতিঝিল ইংলিশ ভার্সনে বাথরুম স্থাপনে ৫ লাখ, মতিঝিল শাখায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে ১০ লাখ, টাইলস বসানোয় ১০ লাখ টাকা ইত্যাদি।

ডিআইএ প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজান ২০ শিক্ষার্থীকে বদলি করেছেন। এজন্য জনপ্রতি নিয়েছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তিনি কলেজ শাখার শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য থাকা অবস্থায় শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি ও দাতা সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ উপায়ে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া মেলেনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি - dainik shiksha জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি - dainik shiksha রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য - dainik shiksha দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের - dainik shiksha এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011625051498413