নেত্রকোনার মদনে নিজস্ব অবকাঠামো ছাড়া নামসর্বস্ব ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, ওই উপজেলায় এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলো না করে নিজস্ব জায়গা নেই এমন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিও করেছেন এলাকাবাসী।
এমপিও হওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অবকাঠামো না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, এখন করে নেয়া হবে সবকিছু। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান দেখানো হয়েছে মদনের বালালি এলাকায়। তবে সেখানকার কোনো এলাকাবাসী জানেন না, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা।
রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, বালালি এলাকায় ‘জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তবে ওই এলাকায় ‘বালালি বাঘমারা শাহজাহান মহাবিদ্যালয়’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহজাহান উদ্দিন ভুঁইয়া স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। হাওরের পাশে বিশাল জায়গা, তিনতলা ভবনবিশিষ্ট অবকাঠামো, দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, পাসের হার সন্তোষজনক সব থাকা সত্ত্বেও ওই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও মদন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুকন উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন, সাইদুল হকসহ অন্তত ১২ জন বলেন, এই নামে এলাকায় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মদন বাজার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন কাজী জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া নিয়ে জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ছোট একটি কক্ষে শিক্ষকদের বসার জন্য ছয়টি চেয়ারের ব্যবস্থাসহ তিনটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ছয়টি করে মোট ১৮টি বেঞ্চ রাখা আছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা আরিফুর রহমান খান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে। তারা জানান, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানটি আবদুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে মোট জনবল ১১ জন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ৫০ শতক জায়গা মদনের বালালি এলাকায় রাখা আছে। সেখানে দ্রুত ঘর তৈরি করা হবে। তাদের দাবি, বিএম শাখায় ১৭২ জন ও স্কুল শাখায় ১২৩ জন শিক্ষার্থী আছে। তবে স্কুল শাখা এ বছরেই প্রথম শুরু করা হয়।
তবে স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক বছর আগে ভাড়া বাড়িতে কলেজটির কার্যক্রম শুরু করলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যক্রম ছিল না। শুধু ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় কার্যালয় খোলা থাকে। তবে ওইদিন সরকারি ছুটির দিন থাকার পরও বিএম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঝুমা আক্তার, মনোয়ার হোসেন, নবম শ্রেণির আলিমুল, মো. মোন্না নামের ছয়জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এখন এমপিও হওয়ায় আনন্দিত তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল গফুর জানান, আবেদন সরাসরি করা হয়। আবেদনের আগে বা পরে জেলা থেকে খোঁজখবর নেয়ার সুযোগ নেই। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।