মধ্যরাতে চবির চারুকলার ছাত্রাবাসে তল্লাশি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে তল্লাশি চালিয়েছে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ।

দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তল্লাশি শুরু হয়, চলে রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত। সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইনস্টিটিউটের দুই পাশের ফটকের তালা ভাঙা হয়। প্রায় ৫০ পুলিশ সদস্য ইনস্টিটিউটের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁদের সঙ্গে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া ছিলেন। ছিলেন কয়েকজন সহকারী প্রক্টর। তাঁরা ইনস্টিটিউটের ভেতরে অবস্থিত শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের প্রতিটি কক্ষ ও শিক্ষক ক্লাবে তল্লাশি চালান। দিবাগত রাত দুইটার পর তাঁরা চলে যান।  

তল্লাশির ব্যাপারে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগম বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে বসেছে। তবে তল্লাশির ব্যাপারে তাঁকে প্রশাসন কিছু জানায়নি। তারা কেন তল্লাশি চালিয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

তল্লাশির বিষয়ে জানতে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ ও জহির রায়হান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোনো সময় তল্লাশি চালাতেই পারে। কিন্তু শিক্ষক ক্লাবে কেন তল্লাশি চালানো হলো, তা বোধগম্য নয়। এ ছাড়া ইনস্টিটিউটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন কেন নষ্ট করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন নষ্ট করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, চারুকলার হোস্টেলে বহিরাগত কেউ থাকছেন, এমন খবরে তাঁরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন। কিন্তু বহিরাগত কাউকে পাওয়া যায়নি। হোস্টেলের মূল ফটকের বাইরে একজন বহিরাগত ব্যক্তিকে মুঠোফোনে ভিডিও করতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। 

শিক্ষক ক্লাবে কেন তল্লাশি চালানো হয়েছে, এমন প্রশ্নে মুহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, ক্লাবটির চাবি শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল। মূল ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মুখোমুখি অবস্থানে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শিক্ষক ক্লাবেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে ক্লাবে কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু চারুকলা ইনস্টিটিউট নয়, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি আবাসিক হলে প্রয়োজন অনুযায়ী তল্লাশি চালানো হবে।

আমরণ অনশনের হুমকি

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার মধ্যে ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে আগামী রোববার থেকে অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

গতকাল দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। ইনস্টিটিউটের শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারির সামনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ ও জহির রায়হান।

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ শহীদ বলেন, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু ৯২ দিনেও এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য দেননি। তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। আলোচনার জন্য আহ্বান জানানো হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। আলোচনা না করলে আগামী রোববার থেকে তাঁরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগম বলেন, শিক্ষকেরা প্রশাসনকে ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবেন না। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই তাঁরা আলোচনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদি আজ আসেন, তাহলে আজই বসবেন।

শ্রেণিকক্ষে পলেস্তারা খসে পড়ার জেরে ২২ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বছরের ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে এক দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন থেকে অচল ছিল ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম।

পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে গত মঙ্গলবার থেকে তাঁরা আবার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এদিকে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানিয়েছেন।

চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট।

ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। ছাত্রীদের জন্য মাত্র একটি শৌচাগার আছে। আবাসনসুবিধা পান মাত্র ১৩ শিক্ষার্থী। গ্রন্থাগারে বই নেই। ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048890113830566