মন্ত্রীদের আমলনামা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বর্তমান সরকারের প্রথম দুই বছরে মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দপ্তর বদল, পুনর্বণ্টন, একজন প্রতিমন্ত্রীকে পদোন্নতি, নতুন দুই প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ—এমন টুকটাক সিদ্ধান্তেই সীমিত থেকেছেন। গত ৭ জানুয়ারি সরকারের দুই বছর পর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কাজের মূল্যায়ন বিশেষভাবে দেখতে শুরু করছেন সরকারপ্রধান। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রের দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে। রোববার (১০ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাহরাম খান ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সরকারের দুই বছর পূর্তি শেষে মন্ত্রিসভার কোন সদস্য কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কত দিন দায়িত্ব পালন করছেন, কাদের দপ্তর বদল হয়েছে, কাদের দপ্তর পুনর্বণ্টন হয়েছে, কে কোন মেয়াদ থেকে মন্ত্রিসভায় আছেন, কারা টানা তিন মেয়াদে সরকারপ্রধানের টিমে আছেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা মন্ত্রণালয় কেমন চালাচ্ছেন—এসব বিষয়ে একাধিক উৎস থেকে খবর সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের টিম মেম্বারদের বিষয়ে কিছু সাধারণ খবর নিয়মিত নেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দুই বছর শেষে বিশেষভাবে খোঁজ নেওয়ার খবরে অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার খোঁজখবর কেন, কী কারণে নেওয়া হচ্ছে, সেটা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ জানেন না।

টানা তিন মেয়াদের সরকারের তৃতীয় পর্বের দ্বিতীয় বছর পার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত এক যুগে সরকারপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজে একটানা দায়িত্ব পালন করছেন। যখন নতুন সরকার গঠন করেছেন, তখন তাঁর টিম মেম্বার পরিবর্তন করেছেন। তবে সরকার গঠনের পর বিশেষ বড় ধরনের কারণ ছাড়া মন্ত্রিসভা থেকে বাদ কাউকে দেননি। এবারের মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ বেশি হওয়ায় সার্বিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বড় রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সরকার, দল ও প্রশাসন—সব দিকের দায়িত্বশীলরা ধারণা করছিলেন, এক বছর পর মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল প্রয়োজন হবে। প্রথম বছর পূর্ণ হওয়ার পর সে রকম আলোচনাও ছিল; কিন্তু এই দুই বছরের মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ইমরান আহমদকে প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী করা হয়েছে। বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময়ে কয়েকজন পূর্ণমন্ত্রীর যোগ ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর পুনর্বণ্টনের জোর আলোচনা ছিল; কিন্তু আর কিছু হয়নি। শুধু পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মারা গেলে শূন্যপদ পূরণ করা হয়।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রশাসনিক সূত্র জানায়, সরকার গঠনের পর সরকারপ্রধান তাঁর টিম মেম্বারদের কাজের মূল্যায়নের জন্য অন্তত দুই বছর সময় নেন। প্রধানমন্ত্রী তাই স্বাভাবিকভাবেই খোঁজখবর নিচ্ছেন। মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিসভায় যত হেভিওয়েটই থাকুন, প্রধানমন্ত্রীকেই সব দিক দেখতে হয়। কিন্তু এবার একেবারে নতুনদের নিয়ে যাত্রা শুরু করায় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক বেশি ‘লোড’ নিতে হচ্ছে। সে বিচারে তিনি কিছু পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারেন। তবে কেউ বাদ পড়ার আশঙ্কা কম। কয়েকজন পূর্ণমন্ত্রী যোগ হওয়ার সঙ্গে বিদ্যমানদের দপ্তর বদল ও পুনর্বণ্টনের সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্ত্রিসভার রদবদলের দাপ্তরিক বিষয়গুলো দেখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিধি অনুবিভাগ। এই অনুবিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহ্মদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে তিনি মন্ত্রিপরিষদসচিবকে নির্দেশ দেন। এরপর আমরা জানতে পারি। এখন পর্যন্ত এসংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা নেই।’

কেমন গেল দুই বছর : গত দুই বছরে বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকলেও খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি ছিল না। কিন্তু ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে গতবারের মতো এবারও সমালোচনা সইতে হয়েছে সরকারকে। কৃষক ও মিল মালিকদের কাছ থেকে ঠিকভাবে ধান-চাল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বিপরীতে ঠিক সময়ে চাল আমদানিও হয়নি। বিলম্বে দেওয়া চাল আমদানির অনুমোদনও খাদ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বেশি সুযোগ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক এই চাল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ফল আসেনি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখনো চালের দাম বাড়তির দিকেই।

অন্যদিকে পেঁয়াজের জোগান ও দাম ব্যবস্থাপনায় সমালোচিত হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এখন ভোজ্য তেল গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বলে আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাজাকারের তালিকা প্রকাশের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ হয়নি। অন্যদিকে করোনা নিয়ে প্রথম দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কপালে ব্যাপক সমালোচনা জুটলেও শেষতক ভালো অবস্থানে ফিরেছেন।

ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয়ের সমস্যা হচ্ছিল প্রথম দিকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গঠনের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় গত ২০১৯ সালের মে মাসে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের দায়িত্ব কমিয়ে তাঁকে শুধু ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত ডাক টিকিটে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ লেখা থাকায় নতুনভাবে সমালোচনায় আছেন মোস্তাফা জব্বার। একই আদেশে অন্য তিনটি পরিবর্তনও আনা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের দায়িত্ব কমিয়ে শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবেও মন্ত্রিসভার কেউ কেউ সমালোচিত হচ্ছেন। কারোর বিরুদ্ধে বিতর্কিত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গাড়ি উপহার নেওয়া, কেউ বা সাধারণদের জন্য বরাদ্দের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে ভালো কাজে সুনাম কুড়িয়েছে কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ভূমি সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ইলিশের অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধির সুনাম গেছে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের তিলকে। করোনাকালে পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ কার্যক্রম এবং আম্ফানসহ একাধিক দুর্যোগ সামলেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে চমক বর্তমান মন্ত্রিসভা। সব রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকের হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়ে বেশির ভাগ নতুন সদস্য নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী। জোটে নির্বাচন করেও সরকারে শুধু আওয়ামী লীগ আছে। ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায় নতুন মুখের সংখ্যাই অর্ধেকের বেশি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037338733673096