শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন সেসিপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেসিপের ১ হাজার ১৮৭টি পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে তারা শিক্ষা ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। কিন্তু বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর ৪ নভেম্বর সে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছেন তারা।
বুধবার সন্ধ্যায় সেসিপের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রাজধানীর হেয়ার রোডে মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিষদের সভাপতি ও বাড্ডার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাকিম ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা ফেরদৌসি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় সেসিপের জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরের বিষয়ে আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিতে আমরা শিক্ষা ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ৪ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করছি।
সেসিপের ১ হাজার ১৮৭টি পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর শিক্ষাভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা বলছেন, এ পদগুলো রাজস্বখাতে স্থানান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও ইতিবাচক কাজ করেছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এ পদগুলো রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার সম্মতি দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ওই ১ হাজার ১৮৭টি পদের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তার জানান, সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেসিপ প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। সেসিপের ফলোআপ হিসেবে ২০০৭ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন মেয়াদে এসইএসডিপি হাতে নেয়া হয় এবং এর ফলোআপ প্রজেক্ট হিসেবে সব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) চালু করা হয়, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এই কর্মকর্তারা বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কারিকুলাম বাস্তবায়ন, হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসার, আইসিটিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ, স্কুল মনিটরিং ও নিবিড় একাডেমিক সুপারভিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল শক্তিশালীকরণ ও সফটওয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধান, সাধারণ শিক্ষা ধারার সঙ্গে চালু করা ভোকেশনাল ট্রেড কোর্স বাস্তবায়নে মনিটরিং, নকল মুক্ত পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনসহ সব পর্যায়ের নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন, বিজ্ঞান ও উন্নয়ন মেলা আয়োজন,বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা, শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজনসহ প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের করোনা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের মতো জাতীয় কার্যক্রমে সেসিপের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। নতুন শিক্ষাক্রমের উপযোগিতা যাচাইয়ের পাইলটিং কার্যক্রমসহ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
তারা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেসিপের ১ হাজার ৪৩৯টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন অনুমোদন দিয়েছেন। সে অনুশাসন বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মোট ১ হাজার ১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরে সম্মতি জ্ঞাপন করে। অর্থ বিভাগ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি ওই ১ হাজার ১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সম্মতি না দিয়ে করে জনবল ব্যতীত শুধমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রামের ৮০১টি পদ সৃজনের সম্মতি দেয়। সে বছরের ২০ জুন ১ হাজার ১৮৭ টি পদ জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ পুনরায় অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়। তবে সে বছরের ২৮ জুন অর্থ বিভাগ ফের অসম্মতি জানায়।