দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : মরুভূমির মাঝে আস্ত এক স্বপ্নের নগরী। ধু ধু বালির মধ্যে কৃত্রিম ঝর্না, সমুদ্র, পাহাড়, কী নেই! সৌদি আরবে তৈরি হওয়ার কথা সেই নিওম (এনইওএম) জনপদ। কিন্তু নির্মাণের কাজ নাকি থমকে যেতে পারে যে কোনও সময়।
সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের স্বপ্নের প্রকল্প এই নিওম। আধুনিক এই জনপদ তৈরি শেষ হলে সেখানে বাস করতে পারবেন ৯০ লাখ মানুষ। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়েই ক্রমে সরব হচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরা। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
তবে বাধা-প্রতিবাদেরও আগে অন্য একটি কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে প্রকল্প। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই আধুনিক প্রকল্প রূপায়ণের মতো যথেষ্ট প্রযুক্তিই নাকি এখনও নেই।
বিজ্ঞাপনী ভিডিয়োতে দেখানো হয়েছে, এই জনপদে কোনও গাড়ি চলবে না। দূষণের মাত্রা হবে শূন্য। অথচ বাসিন্দারা গন্তব্যে পৌঁছবেন পাঁচ মিনিটে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এতো আধুনিক প্রযুক্তি এখনও তৈরি হয়নি সৌদি আরবে। অনেকেই মনে করছেন, যুবরাজের ভাবনার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই।
সৌদি প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, মাইলের পর মাইল ফাঁকা মরূভূমিতেই তৈরি করা হচ্ছে নিওম প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা ভিন্ন। অভিযোগ, যেখানে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে বাস ছিলো হুয়াইতাত জনজাতির। ওই প্রকল্পের কারণে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই জনজাতির মানুষদের।
অভিযোগ, উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হন জনজাতির মানুষজন। প্রশাসন ধরপাকড় চালায়। এক প্রতিবাদীর মৃত্যুও হয়েছে। এই নিয়ে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলিও।
নিওম জনপদে থাকবে রাষ্ট্রের কড়া নজরদারি। আনাচকানাচে থাকবে সিসি ক্যামেরা। একাংশের দাবি, এর ফলে বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্যও রাষ্ট্রের কাছে ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
পরিবেশবিদেরা এই প্রকল্প নিয়ে ইতোমধ্যেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিওমের কারণে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মরুভূমির এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে পরিযায়ী পাখিরা। বহুতল গড়ে উঠলে তারা পথ ভুল করতে পারে।
রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর শরৎকালে ইউরোপ থেকে আফ্রিকা যায় প্রায় ১০০ প্রজাতির ২১০ কোটি পরিযায়ী পাখি। সৌদির তাবুক অঞ্চল দিয়েই আফ্রিকা যায় তারা। নিওম তৈরি হলে পরিযায়ী পাখিদের পথে বাধা আসতে পারে। বহুতলে ধাক্কা খেয়ে বিপত্তিও ঘটতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন পক্ষীবিদেরা।
সৌদি প্রশাসনের দাবি, এই জনপদে কার্বন নিঃসরণ হবে শূন্য। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমনটা আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সম্ভব নয়। তা ছাড়া বিশাল এই আধুনিক জনপদ তৈরি করতে গেলে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ হবে। দাবি, ১৮০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসৃত হতে পারে, যা প্রকৃতির যথেষ্ট ক্ষতি করবে।
মরুভূমির মাঝে তৈরি হবে জনপদ। জলের জোগান থাকবে সীমিত। আবহাওয়া থাকবে চরম। এই আবহে নিওম জনপদে বসবাসের খরচ প্রচুর হতে চলেছে। মনে করা হচ্ছে, খুব কম মানুষেরই সেখানে বসবাসের ক্ষমতা থাকবে।
সৌদি আরবে এ ধরনের বড় প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা কম নয়। সে কারণেও নিওম নিয়ে আশঙ্কায় অনেকেই। এ রকমই এক বড় প্রকল্প কিং আবদুল্লা ইকোনমিক সিটি। সেখানে ২০ লাখ মানুষ অনায়াসে বসবাস করতে পারেন। কিন্তু এখনও সেই জনপদ ফাঁকাই পড়ে রয়েছে।
জেদ্দা শহরের জেদ্দা টাওয়ার ছিলো এককালে পৃথিবীর উচ্চতম আবাসন। সেটিও এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নিওমকে নিয়েও সেই আশঙ্কাই জমছে বিনিয়োগকারীদের মনে।
যদিও এ সব আশঙ্কার মধ্যেই নিওমের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রশাসন দাবি করছে, এ বছরের শেষেই জনপদের কিছু অংশে বসবাস শুরু করা যাবে। ১৪ হাজার ২০০ বর্গমাইল জুড়ে গড়ে উঠতে চলেছে সেই আধুনিক শহর। তার মধ্যে থাকছে ১২টি প্রকল্প।
কী নেই নিওমে! দুনিয়ার সব থেকে বড় ভাসমান পরিকাঠামো, সিহর্স আকৃতির দ্বীপ, যেখানে থাকবে বিলাসবহুল রিসর্ট, বন্দর, পাহাড়ের খাঁজে হোটেল, বহুতল। তৈরি হবে প্রযুক্তি হাব।
সৌদির যুবরাজের আশা, এর ফলে দেশে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি মজবুত হবে। রিপোর্ট বলছে, প্রকল্পগুলির খরচ ৫০ হাজার কোটি ডলার থেকে এক লক্ষ কোটি ডলার হতে পারে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫০ লক্ষ কোটি টাকা থেকে শত লক্ষ কোটি টাকা।
জনপদে কোনও রাস্তা থাকবে না। চলবে না গাড়ি। দোকান, বাজার থাকবে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। ড্রোন, রোবট, ভোলোকপ্টার জিনিসপত্র পৌঁছে দেবে। গোটা জনপদে আলো জ্বলবে, যান, যন্ত্র চলবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির মাধ্যমে।
মরুভূমিতে এমনিতে বৃষ্টির দেখা মেলে না। তবে নিওমে মেঘ তৈরির জন্য যন্ত্র থাকবে। প্রয়োজন মতো বৃষ্টি উৎপন্ন করা হবে। আকাশে সব সময়ই থাকবে কৃত্রিম চাঁদের আলো। সূত্র: আনন্দবাজার