মশার কামড় ছড়াচ্ছে জাপানি এনসেফালাইটিস ভাইরাস

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

জাপানি এনসেফালাইটিস ভাইরাস একটি মশাবাহিত ফ্ল্যাভিভাইরাস এবং এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই কারণে সব বয়সের মানুষেরই এনসেফালাইটিস ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এটি ডেঙ্গু, হলুদ জ্বর এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মতো একই বংশের অন্তর্গত।

কিউলেক্স মশার কামড়ে ছড়ানো জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে দেশের ৩৬ জেলায়। সংক্রমণে এগিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। গতবছর সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগের রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক। ইতোমধ্যে জেলাটিকে রেড জোন তালিকাভুক্ত করে কাজ শুরু হয়েছে।

কিউলেক্স মশা। ছবি : সংগৃহীত

গত সোমবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে নগরীর এক রেস্তোরাঁয় আয়োজিত দিনব্যাপী এ কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিরআর’বি) ও বেসরকারি সংস্থা পাথ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ।

কর্মশালায় জানানো হয়, সারা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস বিদায় না নিতেই দেশে মশাবাহিত রোগ ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস’ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। দেশে গত ৫ বছরে ১২ হাজার ১৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮৮ জন। আর ৪ বছরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৭৯ জনের। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহী জেলা। মূলত মে থেকে ডিসেম্বর মাসে বেশি সংক্রমণ হওয়া এ ভাইরাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে শিশুরা। গ্রামাঞ্চলে মশার বংশবৃদ্ধি হওয়া এলাকায় এ ভাইরাসের বেশি সংক্রমণ হয়ে থাকে।

কর্মশালায় গবেষকরা জানান, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিভাগে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ। সবচেয়ে কম আক্রান্ত বিভাগ বরিশাল ও সিলেট বিভাগ। এ দুই বিভাগে আক্রান্ত হন মাত্র এক শতাংশ রোগী। এ পরিসংখ্যানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ ও ৯ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হন।

প্রথম সংক্রমণ ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে দেখা যায়

১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে এনসেফালাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঘটনাটি সামনে আসে। এই কারণে একে জাপানি এনসেফালাইটিস ভাইরাসও বলা হয়। এনসেফালাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণের হার খুবই কম, তবে এনসেফালাইটিসের কারণে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

জাপানি এনসেফালাইটিসের লক্ষণ

অনেক সময় জাপানি এনসেফালাইটিস ভাইরাসের কোন লক্ষণ দেখা যায় না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুরুতে কোন লক্ষণ দেখা যায় না। এনসেফালাইটিস ভাইরাসের সাধারণ উপসর্গ সম্পর্কে বলতে গেলে সংক্রমিত ব্যক্তিদের জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, স্নায়বিক লক্ষণ, দুর্বলতা, মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার এবং শিশুদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি দেখা যায়।

জাপানি এনসেফালাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্নায়বিক রোগ হয়, তবে এর হার এক শতাংশেরও কম। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া, গুরুতর সংক্রমণ থেকে আরোগ্যলাভ করা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষের মধ্যে স্নায়বিক এবং মানসিক লক্ষণগুলো অব্যাহত থাকতে পারে।

জাপানি এনসেফালাইটিস প্রতিরোধ করার জন্য সময়মতো পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কেউ যদি এমন কোন এলাকায় থাকেন যেখানে জাপানি এনসেফালাইটিস ভাইরাস ছড়িয়েছে তাহলে তার পরীক্ষা করানো উচিত। এর পাশাপাশি তিনি যদি জাপানি এনসেফালাইটিসের কোন উপসর্গ দেখতে পান, তাহলে তাকে একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। এর পাশাপাশি নিজে কিছু না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

জাপানি এনসেফালাইটিসের চিকিৎসা জাপানি এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর কোন নিশ্চিত চিকিৎসা নেই। সংক্রমণের পরে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তার ওপর ভিত্তি করে ডাক্তাররা তাদের চিকিৎসা করেন এবং তাদের পর্যবেক্ষণে রাখেন। বিশ্রামের পাশাপাশি চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি পরিমাণে তরল গ্রহণের পরামর্শ দেন।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য দেন পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর, ইপিআই ও সার্ভিলেন্সের ডেপুটি পরিচালক ডা. জেসমিন আরা খানম, এমএনসিএন্ডএইচ’র সাবেক পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ডা. শারমিন সুলতানা, পাথের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ডা. কামরান মেহেদি, আইসিডিডিরআর‘বির প্রধান গবেষক ডা. রেবেকা সুলতানা ও সহকারী প্রধান গবেষক ডা. আরিফা নাজনিন প্রমুখ।

কর্মশালা থেকে জানানো হয়, ইপিআই শিডিউলের আওতায় এ ভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্তির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে চিকিৎসকরা জানান, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের টিকা অনুমোদন দিয়েছে। সামনে বছর বাংলাদেশে সেই টিকা আসবে এবং প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের চারটি জেলায় জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব ধরনের সংকট মোকাবিলা করার আহ্বানও জানান চিকিৎসকরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050578117370605