মহাবিপদ হয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোকা, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার গতির বাতাস বুকে নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের ৭৯৫ কিলোমিটারের মধ্যে ফণা তুলছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। এরই প্রভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাগর। কক্সবাজারে ঝরেছে মুষলধারে বৃষ্টি। বাতাসের বেগ দেখে আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে। 

রেড অ্যালার্ট জারি করেছে দুর্যোগ সতর্কতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সিস্টেম (জিডিএসিএস)। সংস্থাটি এ মুহূর্তে বিশ্বে চলমান দুর্যোগগুলোর মধ্যে মোকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করেছে।

গতকাল রাত সাড়ে ১০টা থেকে সব ধরনের লঞ্চ ও নৌযান সদরঘাট থেকে চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মহেশখালীর নিকটবর্তী সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে আজ শনিবার গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রও আংশিক বা পুরো বন্ধ থাকতে পারে। কক্সবাজার সৈকতের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোকার প্রভাবে আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকেই কক্সবাজারসহ দেশের অন্যত্র ঝরবে বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের সময় হতে পারে জলোচ্ছ্বাস। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা নাগাদ অতিক্রম করতে পারে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল। ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় উপকূলে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে দুর্গম চর, টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্র হাতের নাগালে থাকলেও সম্পদের মায়া তাড়া করে ফিরছে তাঁদের। ঝড়ের বেগে ঝরে যেতে পারে মৌসুমি ফল, জলোচ্ছ্বাসে নুয়ে পড়তে পারে ধানক্ষেত। তবে এসব ঝুঁকি মাথায় রেখেই উপকূলে চলছে জোর প্রস্তুতি। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। টেকনাফের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের। সেখানে ৩৬টি ভবন ও স্থাপনাকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। দ্বীপে ৭ দিনের খাদ্য মজুতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশের অন্য উপকূলেও চলছে প্রচার। প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকের গতিপথ বদলে সামান্য বাঁক নিয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে ঘূর্ণিবায়ুর চক্র। এভাবে এগোলে আগামী রোববার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মোকা বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শামিম হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘মোকা সবচেয়ে প্রভাব ফেলতে পারে কক্সবাজার উপকূল ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে। দ্বীপের বড় অংশ জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ের সময় ছাড়াও আগে-পরের বৃষ্টিতে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিধসের।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘যেসব মডেল বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তাতে টেকনাফের দক্ষিণ দিক দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র চলে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এটি আমাদের সীমানার বাইরে। তবে কেন্দ্র পরিবর্তনও হতে পারে। এবার ঘূর্ণিঝড়ের শরীরের ৫০ শতাংশ চলে যাচ্ছে মিয়ানমারে; বাকিটা থাকছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে আমরা পাচ্ছি ঘূর্ণিঝড়ের বাঁ দিক, যেটির তীব্রতা ডান দিকের চেয়ে সাধারণত কম। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র যেখান দিয়ে যায়, সেখানে ক্ষতি বেশি হয়। এর পর থাকে ডান দিক, পরে বাঁ।’ তিনি বলেন, ‘মোকার কেন্দ্র টেকনাফ দিয়ে গেলে সেখানে তীব্রতা বেশি হবে। ক্ষতির দিক থেকে টেকনাফকে ২০ নম্বর দেওয়া হলে, এর পরই আকিয়াব বা মিয়ানমার উপকূলকে দিতে হবে ১৯। টেকনাফের ওপরে কক্সবাজারকে দিতে হবে ১৮ নম্বর।’

পরিচালক জানান, ঘূর্ণিঝড়টির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের পরিধির বিস্তার ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে অতিভারী বৃষ্টি, প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রবৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রবল বৃষ্টির ফলে ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল টিম গঠন, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ, সাপে কাটা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম, অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় জ্বালানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

২০১৫ সালে রয়্যাল মিটিওরোলোজিক্যাল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ইদ্রিস আলম তাঁর গবেষণা প্রবন্ধে ১৪৮৪ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হেনেছে এমন ১৮৭টি ঘূর্ণিঝড়ের ক্যাটালগ বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল ও খুলনা উপকূল দিয়ে যথাক্রমে ৩০, ৪৬, ১৯, ৪১ এবং ৫১টি ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076930522918701