বেতন বৈষম্য নিরসন তথা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবিতে আগামীকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন নিয়ে গঠিত মোর্চা বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। ইতিমধ্যে শত শত শিক্ষক ঢাকায় পৌঁছেন বলে জানা গেছে।
যদিও 'আখেরী চাহার সোম্বা'র উপলক্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছুটি থাকলেও আগামীকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মহাসমাবেশে যোগ দিতে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি পাবেন না প্রাথমিকের শিক্ষকরা। ২৩ অক্টোবর শিক্ষকদের কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি না দিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সোমবার (২১ অক্টোবর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিভাগীয় উপ পরিচালক এবং জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়।
এর আগে এ দাবি আদায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গত ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস, ১৫ অক্টোবর ৩ ঘণ্টা এবং ১৪ অক্টোবর কর্মসূচির প্রথমদিনে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ ডাকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। যদিও কর্মবিরতি পালন করা শিক্ষকদের চিন্হিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা বুধবার (২২ অক্টোবর) দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘আগামীকাল সারা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে যোগ দিতে হাজার হাজার শিক্ষক ঢাকায় আসছেন। এদিকে শিক্ষক নেতারা ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ মঙ্গলবার শিক্ষক নেতারা শহীদ মিনারে মহা সমাবেশ আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে মহাসমাবেশের বিষয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি কাল শহীদ মিনার জনসমুদ্রে পরিনত হবে।’
শিক্ষক নেতারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলে সাথে সাথে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন না করে কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সাথে প্রহসনমূলক আচরণ করছেন। এতে করে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান কমেছে। বেতন বৈষম্য নিরসন না হলে শিক্ষকরা ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবেন। মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিবেন শিক্ষক নেতারা।
শিক্ষকরা আরও জানান, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী শিক্ষকরা ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসলে তৎকালীণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ১ মাসের মধ্যে শিক্ষকদের দাবি বাস্তাবয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে আশ্বাসে শিক্ষকরা আমরণ অনশন স্থগিত করেন। কিন্তু ২ বছর পার হলেও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষকরা আবারো আন্দোলনের ডাক দিলে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করেন। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সরকারের ১০ মাস পার হয়ে গেলেও সঠিক কোনো উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষকরা আবারও আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ, প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা, প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান, নীতি নির্ধারণী চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ সরকার, মুখপাত্র বদরুল আলম, রবিউল ইসলাম ও আব্দুস সবুর গত ১৪ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, ‘কর্তৃপক্ষ সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবি বাস্তবায়নে শতভাগ আন্তরিক নন। তাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কারো আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করবোনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিবো।’