মাছচাষ শিখতে যেতে চান বিদেশে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

অর্থনৈতিক সংকটেও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের আবদার থেমে নেই। এবার মাছচাষ শিখতে বিদেশ ভ্রমণের আবদার করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এজন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। 

প্রকল্পের আওতায় বিদেশে প্রশিক্ষণে খরচ হবে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২২ শতাংশই খরচ হবে বিদেশে প্রশিক্ষণে। তবে কতজন এ প্রকল্পের আওতায় কত দিনের প্রশিক্ষণে বিদেশ যেতে চান, তা উল্লেখ করা হয়নি প্রকল্প প্রস্তাবে। পরিকল্পনা কমিশনের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা আসিয়ানের কাছ থেকে নেবে বাংলাদেশ। এজন্য ‘মৎস্য চাষ ও মৎস্য খাত আসিয়ান বাংলাদেশের সহযোগিতা (টিপিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ প্রকল্পে ব্যয় মোট ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন সময় প্রস্তাব করা হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত। পুরো ব্যয়ই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তম মৎস্য চাষ অনুশীলন (গ্যাপ), ক্লাস্টার একোয়া কালচার ফার্মিং বাস্তবায়নের (এএমএস) উদ্দেশ্য। পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনে মৎস্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ এশিয়ান নেশন্সের (আসিয়ান) কাছ থেকে সহযোগিতা নেবে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে দুটি কর্মশালা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও প্রতিবেদন জমা। নিরাপদ মাছচাষ, রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। মাছের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা শিখবেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কর্মশালায় বাংলাদেশ থেকে ৪ কর্মকর্তা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, মূলত আসিয়ানের সঙ্গে সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। আসিয়ানভুক্ত দেশ হতে হলে আগে সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হতে হয়। এ প্রকল্পটি সেই উদ্দেশ্যেই নেওয়া। এ প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়ায় একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মশালায় আসিয়ানভুক্ত দেশসহ বাংলাদেশ অংশ নেবে।

সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির অংশ হিসেবে আপাতত বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত থাকলেও বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, যে কোনো টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। নিজেদের দক্ষতা অর্জনের জন্যও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের চেয়ে মাছচাষ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ইন্দোনেশিয়াসহ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা অনেক ভালো। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাও ভালো। মাছচাষে উন্নতি করতে এই কর্মশালার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করা হবে।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। যদি সত্যি সত্যি যারা প্রশিক্ষণের উপযুক্ত তারা যায়, তাহলে প্রস্তাবের যৌক্তিকতা আছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা না গিয়ে যদি মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা সফরে যান, তাহলে সেটি পুরোপুরি অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। প্রশিক্ষণে যেহেতু ডলার ব্যয় হবে, তাই গুরুত্ব বিবেচনা করে অনুমোদন দেওয়া উচিত।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো আসিয়ানের সদস্য হয়নি। জোটের সদস্য হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত মানতে হয়। তবে বাংলাদেশকে আইসিটি ও মৎস্য খাতে উন্নয়নের জন্য শর্ত দিয়েছিল তারা। তাই আসিয়ান সচিবালয়ের সঙ্গে শুরুতে এসব ‘সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনার’ হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আসিয়ানের সদস্য হওয়ার জন্য শর্ত পরিপালনের নির্দেশনা দিয়ে আসছিলেন। এরই অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করাই মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প নেওয়ার এই যুক্তির বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ তো আসিয়ানভুক্ত দেশ হতে পারবে না। সর্বোচ্চ তাদের সহযোগী দেশ হতে পারে। অথবা ব্যবসায়িক চুক্তি হতে পারে। মৎস্য চাষ দিয়ে এগুলোর কিছুই হবে না।

এই প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণের প্রায় ৬৩ লাখ টাকার প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত জানা প্রয়োজন।

প্রকল্প প্রস্তাবে স্টক টেকিং প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য ৩ পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তিন পরামর্শক ও ব্যয়ের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধির জন্য এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ প্রকল্পের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা কমিশন যেসব মতামত দিয়েছে, তা বিবেচনা করছে মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যৌথভাবে কাজ করবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসিয়ান অঞ্চলে। এ খাতে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চলের দেশগুলো ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় করেছে। বাংলাদেশে মোট জনগণের প্রোটিন চাহিদার ৬০ শতাংশ সরবরাহ হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। আসিয়ান অঞ্চলে ১ হাজার ৬৫০টিরও বেশি মাছের প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর ৬৪টি বৃহৎ সামুদ্রিক বাস্তুতন্তের একটি। আসিয়ান সদস্য হলে এ বৃহৎ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ। 

এর আগে বাংলাদেশের মৎস্য খাতে সম্ভাব্য সহযোগিতা পেতে আসিয়ান সচিবালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আসিয়ান সচিবালয় এ লক্ষ্যে আসিয়ান-বাংলাদেশ কো-অপারেশন অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফিশারিজ শীর্ষক একটি খসড়া তৈরি করেছিল। এ খসড়ার ভিত্তিতে এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025200843811035