মাছের বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করছে শিক্ষার্থীরা

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) |

প্রচণ্ড রোদের মধ্যে টানা ছয় ঘন্টা পরিশ্রমের পর পারিশ্রমিক হিসেবে ব্যাগে জমা পড়লো মাত্র কেজি দেড়েক ছোট মাছ। তাতেই খুশি কিশোর আমিরুল ইসলাম (১০)। স্কুল ছুটির অবসরে এটাই তার উপার্জন। দুপুরে রান্না হবে এই মাছ। তাই দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হতেই হাতে-পায়ে লেগে থাকা কাদা ময়লা পরিষ্কার না করেই বাসার উদ্দেশে ছুটে চলা শুরু করেছে আমিরুল। চতুর্থ শ্রেণির এই ছাত্রের দেখা মেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চর হাবিবে।

কলাপাড়ার রামনাবাদ নদী ও সাগর মোহনায় জেগে ওঠা চর এই চর হাবিব। পাশেই আরেকটি চর, চর এরশাদ। সেখানে এখনও কোন স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠেনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জেলেরা এই চরে তিন-চার মাস অস্থায়ী বসতঘর তৈরি করে মাছ ধরা ও শুটকি করার কাজ করে। বালিয়াতলী ইউনিয়নের চর বালিয়াতলী, লেমুপাড়া গ্রামঘেঁষা এই চরে এখন শ্রম বিক্রির কাজ করে আমিরুলের মতো কিশোররা।

চর বালিয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর চতুর্থ শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে আমিরুল ইসলাম। ক্ষুদ্র কৃষক আব্বাস মিয়াজীর তিন

সন্তানের মধ্যে বড় আমিরুল। তার অপর দুই ভাই রবিউল হাসন হাফেজি মাদরাসায় ও ছোট ভাই সোলায়মানের বয়স মাত্র চার।

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) চর হাবিবে জেলে ট্রলারে বসে কথা হয় আমিরুল ইসলামের সাথে। হাতে মাছের ব্যাগ নিয়ে সে তখন বাসায় ফিরছে। আমিরুল জানায়, ‘এখন স্কুল বন্ধ। পড়াও নাই। পরীক্ষার রেজাল্টও দেয় নাই। ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করে না। তাই বন্ধুদের সাথে এখানে এসেছে মাছের জন্য। তবে এজন্য তাকে প্রায় ছয় ঘন্টা খাটতে হলেও খুশি সে। আমিরুলের ভাষায়, ‘সকাল নয়টায় আইছি। ১১টা পর্যন্ত চরেই ছিলাম। কিন্তু কোন মাছ ধরা ট্রলার না আসায় কাম পাই নাই। সাড়ে ১১টায় চাইরডা ট্রলার ঘাটে আইলে আমাগো মাছ বাছা শুরু হয়। দুপুর দুইটা পর্যন্ত মাছ বাইচ্চা পাইছি এই মাছ।’

ব্যাগ খুলে দেখাল আমিরুল। ব্যাগে দেখা যায়, দেড়-দুই ইঞ্চি সাইজের ছোট ছোট বিভিন্ন মাছের পোনা, লইট্রা. ছোট চিংড়ি ও কাঁকড়া। তার সঙ্গে থাকা সপ্তম শ্রেণির মহিম, পঞ্চম শ্রেণির জাকারিয়া, তৃতীয় শ্রেণির ইব্রাহিম, মাদরাসায় পড়ুয়া আবদুল করিমের হাতেও একই সাইজের ব্যাগ।

মাদরাসা ছাত্র শামিম হোসেন জানায়, এখানে (চর হাবিব) শুধু আমরাই না, অনেক অনেক স্কুল-মাদরাসার ছেলেরা আসে। স্কুল-মাদরাসা বন্ধ থাকলে আমরা মাছ বাছি। এখন তো গ্রামে গ্রামে খেলার জায়গা নাই, চরে আইয়া খেলাধুলাও করি, মাছ বাইচ্চা কিছু পাই। কেউ মাছ বেইচ্চা দেয়, কেই আবার বাসায় নেয়।

চর হাবিবে মাছ শিকার করা জেলে মো. তৈয়ব জানায়, বেইন্না রাইতে (ভোর রাতে) গাঙ্গে (নদীতে) জাল পাতি, দুপুরে তুলি। নদীতে এ্যাহন এই ছোড মাছই বেশি পাওয়া যায়। সব মাছ তো আর বিক্রি হয় না। তাই পোলাপাইন (কিশোররা) মাছ বাইচ্চা দেয়। বড় মাছ আমরা রাইখ্যা ছোড মাছ ওদের দিয়া দেই। তুলাতলী মাদরাসা শিক্ষক মো. আকতার হোসেন জানান, চর হাবিবে এখনও অস্থায়ী বসত ঘর হয়নি। গ্রামের ছিন্নমুল পরিবারের স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ওই চরে গিয়ে মৎস্য কুড়ানীর কাজ করে। কেউ বদলাও দেয়। তবে আগের চেয়ে এখন স্কুল-মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া অনেকটা কমেছে। অভিভাবকরা সচেতন ওয়ায় কাজ শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমুখী হচ্ছে এই চরের কিশোররা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023601055145264