দিনের আলোয় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা হিসেবে ছাত্রছাত্রীর নিয়মিত পাঠদান চলছে। দাপ্তরিক কাজও হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হলে চিত্র ভিন্ন হতে থাকে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসার কোনা ঘুপচিগুলোতে জড়ো হতে শুরু করে স্থানীয় চিহ্নিত মাদকসেবীরা। চলে রাতভর নেশা। কিছু কিছু জায়গায় নেশার সঙ্গে চলে জুয়া। এই চিত্র পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্টেশন এলাকায়।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সরকারি হাজি জামাল উদ্দিন ডিগ্রি অনার্স কলেজ, ভাঙ্গুড়া সরকারি ইউনিয়ন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নির্মাণাধীন ভাঙ্গুড়া থানা ভবন, শরৎনগর সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা, উপজেলা পরিষদের পাশের হেলিপ্যাড এলাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুকুরঘাট এলাকা, ভাঙ্গুড়া মহিলা কলেজ চত্বর, বড়াল কিন্ডার গার্টেনের পাশের গরু হাট এলাকা, সিএনজি স্ট্যান্ড সংলগ্ন স্মৃতিসৌধের পাশে, মেটে পুল এলাকা, কালীবাড়ি এলাকার জামিউল উলুম এতিমখানার পেছনের বাগান ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন স্থানে আড্ডা বসায় এই মাদকসেবীরা।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা উপজেলার শ্মশান ঘাটের রাস্তা। নির্জন এই রাস্তায় মাদকসেবীরা ছিনতাইয়ের কাজও করে। সেই সঙ্গে কিছু স্থানে চলে জুয়া। এসব স্থানের বাসিন্দাদের অভিযোগ সবার সামনেই এরা নিয়মিত এসব কাজ করলেও কোনো দপ্তর এদের ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ভাঙ্গুড়া সরকারি ইউনিয়ন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নির্মাণাধীন থানা ভবনে নেশা, জুয়ার সঙ্গে ভাড়াটে মেয়ে মানুষ নিয়েও চলে অশ্লীল কর্মকাণ্ড।
নেশার টাকা জোগাড় করতে এরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। কিছুদিন আগে এই নেশার জন্য ছুরিকাঘাতের ঘটনাও ঘটেছে।
কলেজ হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এই সমস্যা বেশি হয়। এ সময় বেশিরভাগ ছাত্র নিজের বাসায় যাওয়ায় মাদকসেবীরা সুযোগ পায়। পরিত্যক্ত এই ভবনগুলো যদি কলেজ হোস্টেলের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয় তবে এই সমস্যা সম্পূর্ণ সমাধান হবে।
হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান পিয়াল ও ছাত্রলীগ কর্মী সাব্বির হোসাইন সুমন জানান, নতুন ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত টিনশেড ভবনে দরজা জানালা না থাকায় রাতের বেলা স্থানীয় ইয়াবাসেবী ও গাঁজাসেবীরা নিয়মিত আড্ডা দেয়। এ বিষেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরেও তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাদকসেবীরা। নেশার টাকা যোগারের জন্য বিভিন্ন মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের এক ব্যবসায়ী জানান, সন্ধ্যার পরে নিয়মিত বেশ কিছু যুবক ও বয়স্কলোক বিদ্যালয় পেছনের অংশে গাঁজা সেবন করে। এলাকায় এরা পরিচিত ও প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে না।
এ বিষয়ে সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসালাম বলেন, এক সময় বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটত। তবে এখন আর সে সুযোগ নেই। আমার নাইট গার্ড খুবই সতর্ক। তবে বিদ্যালয়ে পেছনে এখনো আড্ডা হয়।
হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ শহিদ্দুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। খুব দ্রুতই অব্যবহৃত ভবনগুলো সিল করে দেয়া হবে যাতে মাদকসেবীরা এখানে প্রবেশ করতে না পারে।
ভাঙ্গুড়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। ভাঙ্গুড়া থানা প্রসাশন এসব এলাকায় কড়া নজরদারি করবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জান বলেন, উল্লিখিত স্থানগুলোতে আমরা কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করব। মাদক বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।