চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র আবির হুসাইনকে বলাৎকার ও মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে হত্যা মামলায় মাদরাসা শিক্ষক মুফতি আবু হানিফকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আবু হানিফ জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানায় পুলিশ।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ঘটনার দিন মঙ্গলবার থেকে ওই শিক্ষক পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। গত চার দিন টানা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তারর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)।
তিনি শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বলাৎকারের ঘটনা যাতে ফাঁস না হয় এ জন্য তাকে পরিকল্পিতভাবে গলাটিপে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে দেওয়ার জন্যই সুকৌশলে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়। যাতে করে খুব সহজে ছেলেধরা গুজব বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, গত চার দিনে আমরা চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি নিয়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করেছি। কারণ মামলাটি ছিল খুব স্পর্শকাতর।
অন্য চার শিক্ষককে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রকে বেশ কিছুদিন বলাৎকার করে আসছিল মাদরাসার সুপার আবু হানিফ। বিষয়টি ওই ছাত্র অন্যদের জানিয়ে দেয়ার কথা বললে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মাদরাসা সুপার। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মাদরাসার অদূরে একটি আম বাগানে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় গলাটিপে খুন করা হয় আবির হুসাইনকে। এরপর হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা শরীর থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।
আলোচিত এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, মাদরাসা সুপার আবু হানিফ জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দামুড়হুদায় পুলিশের ওপর ভয়াবহ হামলা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিল হানিফ।
তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ছেলেধরা গুজবে ভাসছে। মাদরাসার ওই ছাত্রকে হত্যার ঘটনার জন্য আবু হানিফ ঠিক এ সময়টিকে বেছে নেন। ঠান্ডা মাথায় খুন করে গুম করা হয় মাথা। যাতে সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে নিজেকে আড়াল রাখা যায়।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইন মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হয়।
পরদিন সকালে মাদরাসার অদূরে একটি আম বাগানের ভেতর থেকে তার মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ঘটনার দিনই মাদরাসার সুপার মুফতি আবু হানিফসহ পাঁচ শিক্ষককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
বৃহস্পতিবার মাদরাসার অদূরে একটি পুকুরে নিহত আবির হুসাইনের মাথাটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল।