মাদরাসার অফিস সহকারী নিয়োগে ঘুষগ্রহণের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইকান্দি দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসায় অফিস সহকারী নিয়োগে অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসার সুপার আর পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুজনে অফিস সহকারীর একটি পদের জন্য আবেদনকারী ৫ প্রার্থীর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ গ্রহণ করে নানা টালবাহানা করছেন। নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের ১০ দিনেও ফলাফল ঘোষণা না করায় প্রার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিযুক্ত ঘুষ গ্রহণকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সমালোচনা করছেন অনেকেই।

মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী সহিবর রহমান মারা যান। এরপর ওই শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হয়। এতে ১৪ জন প্রার্থী আবেদন দাখিল করেন। নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে মাদরাসার সুপার মাওলানা আবুল কালাম ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাবেদ আলী দুজনে পৃথকভাবে পাঁচজন প্রার্থীর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ গ্রহণ করেন। ঘুষ গ্রহণের পর কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে এ নিয়ে সুপার আর সভাপতির মাঝে টানাপড়েনের সৃষ্টি এবং নিয়োগকার্যক্রম বিলম্বিত হতে থাকে। এর মধ্যে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে গত ২৪ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয় কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। 

অভিযোগ করা হয়েছে ওই দিন দুপুর ২টায় পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় রাত ৯টার দিকে। সরকারি নিয়ম অনুসারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হবে। কিন্তু এখানে তা মানা হয়নি। একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, সুপার আর সভাপতি তাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়। এ নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে পরীক্ষা শেষে সুপার আর সভাপতি দ্রুত পালিয়ে যায়। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল পরের দিন ঘোষণা করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। এ নিয়ে প্রার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে যেসব প্রার্থী ঘুষ প্রদান করেছেন তারা এখন বিক্ষুদ্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে জানা গেছে, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ৩ প্রার্থীর কাছ থেকে ২৪ লাখ এবং সুপার ২ প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সভাপতি ও সুপার। নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার পরও ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন- এমন বিষয়ে ওই মাদরাসার এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিয়োগ পাবে তো একজন। সেখানে টাকা নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে পাঁচজনের কাছ থেকে। ফলাফল প্রকাশ করলে তো বাকি চারজনের টাকা ফেরত দিতে হবে। এ কারণে সুপার আর সভাপতি ফলাফল প্রকাশ না করে চুপ করে বসে আছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদরাসা সুপার মাওলানা আবুল কালাম বলেন, আমি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নিইনি। পরিচালনা কমিটির সভাপতি একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। অফিস সহকারী হবে মাদরাসার আর টাকা নিয়ে যাবেন সভাপতি তা তো হবে না। এ কারণে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে না।

অপরদিকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাবেদ আলী বলেন, না, আমি কারো কাছে কোনো টাকা নিইনি। উল্টো সরকারি দলের নেতারা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে তাদের প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য। এ নিয়ে আমি ভীষণ বিপদে আছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিয়ে মাদরাসায় আমরা মীমাংসা বৈঠক করব। তারপর ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

রাতের অন্ধকারে প্রশ্নফাঁস করে নিয়োগ পরীক্ষা প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, এলাকায় নিয়োগ পরীক্ষা সমস্যা হতে পারে এ কারণে আমার দপ্তরে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায় একটু ঝামেলা ছিল তাই রাতে নেওয়া হয়েছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমার জানা নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002781867980957