সুনামগঞ্জের ছাতকে মসজিদ-মাদরাসার জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আইনাকান্দি গ্রামের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পক্ষে-বিপক্ষে মামলাও হয়েছে। মসজিদ-মাদরাসার পক্ষে জমির দলিল, দখল ও দু’টি মামলার আদেশ থাকার পরও আশিকুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি জমি দখলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, উপজেলার
সরজমিন জানা যায়, আইনাকান্দি গ্রামের মসজিদ ও মাদরাসা সংলগ্ন জমিতে একটি মাছের খামার রয়েছে। মসজিদের উত্তর দিকের ওই দেড় একর জমিতে মসজিদ মাদরাসার উন্নয়নের জন্য গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাছের খামার করা হয়। এ খামারের পূর্বদিকে আশিকুল ইসলামের বসতবাড়ি। আর এ বাড়িতে মাটি ভরাট এবং বিভিন্ন কাজে তারা মসজিদের জমি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। গত বন্যায় মসজিদ-মাদরাসার খামারটির ক্ষতিসাধন হলে গ্রামবাসীর উদ্যোগে খামারের পাড় উঁচুকরণ, খামারের উত্তর দিকে গাইড ওয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ শুরু করে গ্রামের লোকজন।
এতে বাঁধ সাধেন আশিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন এ জমি তার। তবে তার ভাই নুরুল ইসলাম স্বীকার করেন- ওই জমি মসজিদ ও মাদরাসার। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গত ৩০শে মার্চ ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পক্ষে-বিপক্ষে মামলা হয়েছে। আশিকুল ইসলামের পক্ষে হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩৯ জন গ্রামবাসী এবং আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গ্রামবাসীর পক্ষে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দু’টি নথিজাত করে গত ২৮শে মার্চ সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মসজিদ-মাদরাসা তথা গ্রামবাসীর পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। জমির দখল ও মালিকানা মসজিদ-মাদরাসার নামে রয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইসলাম উদ্দিন সরজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করেছেন। এরপরও কখনো উত্তর দিকে আবার কখনো দক্ষিণ দিকে জমির মালিকানা দাবি করছেন আশিকুল ইসলাম।
মসজিদের খামারের উন্নয়ন কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত করছেন তিনি। গ্রামের আব্দুন নুর, সেবুল মিয়া, মঈন উদ্দিন, সুরুজ আলী, সিরাজুল ইসলাম (মোতাওয়াল্লি), আব্দুল মান্নান, মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ, ইউসুফ আলীসহ লোকজন জানান, আশিকুল ইসলাম দেশে আসার পর থেকে গ্রামে মামলা-মোকদ্দমা, মারামারি সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের প্রায় ৬০ শতক জমি দখলে নিতে চান তিনি। আইনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, ৩০শে মার্চ মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় মসজিদ কমিটির ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২ জনের অনুপস্থিতি ও সময় দেয়া-নেয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। পরে উভয়পক্ষই মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে আশিকুল ইসলাম জানান, মসজিদ-মাদরাসার জমি তিনি কখনো নিজের বলে দাবি করেননি। গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন বিষয় নিয়ে।
জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস আই আতিকুল আলম খন্দকার জানান, মসজিদ-মাদরাসার ভূমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে আইনাকান্দি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জমা-জমি ও মারামারির ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকটি মামলা রয়েছে। গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল এ ব্যাপারে জানান, ঘটনাটি নিষ্পত্তির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। নিষ্পত্তি হয়নি, তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, আশা করি শিগগিরই এর সমাধান হবে।