ছয়শ’ চারটি স্কুল ও মাদরাসায় এক হাজার ১৯৯টি ভোকেশনাল শিক্ষক পদের মধ্যে মাত্র ৬৭৬টি পদে প্রার্থী সুপারিশ করেছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। গত ২৭ জানুয়ারি এসব প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়। গত ২ মার্চের মধ্যে এসব শিক্ষকপদে যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়। ৫২৮ টি স্কুলে নিয়োগ প্রাপ্ত এসব ট্রেড ইন্সট্রাক্টর এমপিও আবেদন প্রক্রিয়াকরণের নির্দেশ দেয়া হলেও ৮০ টিরও বেশি মাদরাসায় নিয়োগ পাওয়া ইন্সট্রাক্টররা এমপিও আবেদন করতে পারছেন না। ভুক্তভোগীরা দৈনিক শিক্ষার কাছে অভিযোগ করেছেন।
মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টররা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে নিয়োগ পেয়েছি কিন্তু এখনো এমপিওর আবেদন করতে পারিনি। অথচ স্কুলগুলোতে নিয়োগ পাওয়া ট্রেড ইন্সট্রাক্টররা অনেকেই এমপিও আবেদন করেছেন। গত এমপিও সভায় তাদের মধ্যে অনেকে এমপিওভুক্ত হয়ে গিয়েছেন। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমপিও আবেদনের জটিলতা নিরসনের জন্য কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী এ বিষয়টি নিয়ে গতকাল ১৯ এপ্রিল কথা হয় মাদরাসা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। রাত সাড়ে আটটায় দৈনিক শিক্ষার নিয়মিত ফেসবুক লাইভে এ বিষয়ে আলোচনা করেন দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের এমপিও আবেদন গ্রহণের মেমিস সফটওয়্যার এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রোগ্রামাররা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন মার্চ মাসের শেষেই ট্রেড ইন্সট্রাক্টর এমপিও আবেদন গ্রহণের জন্য সফটওয়্যার প্রস্তুত করবেন। কিন্তু করোন ভাইরাস সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় মার্চ মাসের মাঝামাঝি দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি বা লকডাউন শুরু হয়। তাই সফটওয়ারটি প্রস্তুত করা যায়নি। আটকে গেছে ট্রেড ইন্সট্রাক্টর এমপিও আবেদন গ্রহণ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, সফটওয়্যার প্রস্তুত করার বিষয়ে আমরা প্রোগ্রামারদের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি তারা শিগগিরই সফটওয়্যারটি আপডেট করে দিতে পারবেন। সফটওয়্যার আপডেট হলেই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আদেশ জারি করে এমপিও আবেদন অগ্রায়ন ও প্রক্রিয়াকরণ করতে বলা হবে।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি ছয়শ’ চারটি স্কুল ও মাদরাসায় এক হাজার ১৯৯টি শিক্ষক পদে নিয়োগে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। গত ৮ জানুয়ারি থেকে এসব পদে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। ২২ জানুয়ারির পর্যন্ত চলে আবেদন গ্রহণ। সে প্রেক্ষিতে গত ২৭ জানুয়ারি ৬৭৬টি পদে নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। তবে, এসব পদে নিয়োগে ১৩ হাজার ২৭৬টি আবেদন জমা পড়লেও ৩৪৩টি পদের জন্য কোন প্রার্থী পাওয়া যায়নি। আর ১৮০টি মহিলা কোটার পদে কোন মহিলা প্রার্থী আবেদন না করায় নিয়োগ সুপারিশ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। গত ২ মার্চের মধ্যে এসব শিক্ষকদের যোগদান করতে বলা হয়েছিল।
জানা গেছে, ১০টি বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে এসব প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়েছে। ফুড প্রসেসিং, সিভিল কনস্ট্রাকশন, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ার্কস, ড্রেস মেকিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, জেনারেল মেকানিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং, প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিং এবং ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেশন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
সাধারণ ধারার স্কুলগুলোতেও চালু হচ্ছে বৃত্তিমূলক বা ভোকেশনাল কোর্স। সাধারণ শিক্ষায় বৃত্তিমূলক কোর্স চালুর অংশ হিসেবে এসব শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনবল কাঠামো সংশোধন করে এসব পদের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে এসব পদে নিয়োগে সম্মতি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে সেসিপ প্রকল্পের আওতায় ৬০৪টি স্কুল ও মাদরাসায় ৬৭৬টি পদে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হল।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সেসিপ প্রকল্পের আওতায় ছয় শতাধিক স্কুলে ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল কাঠামো সংশোধন করে নতুন ৪টি পদ অর্ন্তভুক্ত করা হবে। আর জনবল কাঠামো সংশোধন করে এ স্কুলগুলোতে ২জন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ও ২জন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগে গত ৩ নভেম্বর সম্মতি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সে প্রেক্ষিতে, গত ১ ডিসেম্বর স্কুলগুলোতে ২জন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ও ২জন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সাধারণ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হবে ভোকেশনাল কোর্স। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত ট্রেডগুলোর মধ্যে পছন্দ অনুসারে দুটি ট্রেড চালু করতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে, কর্মমূখী শিক্ষাকে আরও জনপ্রিয় করতে এবং বেকারত্ব কমাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিটি সাধারণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুটি করে ভোকেশনাল ট্রেড অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আর ইতোমধ্যে ভোকেশনাল কোর্স চালুর কাজ শুরু করেছে সরকার।