সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের সতর গ্রামের আনোয়ারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিমের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলামের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রুকনুজ্জামান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের এলাকায় দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্থানীয়রা ১৯৮৬ সালে আনোয়ারুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশ-বিদেশের দানশীল ব্যক্তিরা নানাভাবে ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় অবদান রাখছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মাদরাসাটির মুহতামিমের (প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক) দায়িত্ব পালন করে আসছেন সতর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার। কিন্তু তার দায়িত্বকালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব ম্যানেজিং কমিটিকে দেননি। সরল বিশ্বাসে বিগত কমিটির সদস্যরা তার কাছে হিসাব প্রকাশের জোর দাবি জানান। এ সুযোগে দেশ-বিদেশের প্রায় ৩১টি খাত থেকে নগদ ও বিভিন্ন ভাবে পাওয়া সাহায্য-সহযোগিতা এবং অনুদানের অন্তত ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মুহতামিম আব্দুস সাত্তার। এ ছাড়া মাদরাসায় দানকৃত জমিও বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। সম্প্রতি স্থানীয়দের জোর দাবিতে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি তার কাছে সব কিছুর হিসাব চাইলে নানা টালবাহানা করে হিসাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এর জেরে ২৬ ফেব্রুয়ারি মাদরাসার একটি বৈঠকে তার অনুসারীরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নূরুল ইসলামসহ অন্য সদস্যদের ওপর হামলা করেন। এ বিষয়ে নূরুল ইসলাম বাদী হয়ে সিলেট জালালাবাদ থানায় একটি মামলা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুহতামিম আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে রুকনুজ্জামান চৌধুরী জানান, মাদরাসায় মুহতামিম তার ছেলে ও নাতনিসহ তার পরিবারের ৬ জন সদস্যকে চাকরি দিয়েছেন। মাদরাসায় দাখিল সমমান পর্যন্ত মেয়েদের ক্লাস রয়েছে। তার ছেলে মাওলানা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ। মুহতামিম ও তার ছেলের মদদে মাদরাসার নাজিম (শিক্ষা সচিব) মো. কুতুব উদ্দিন স্থানীয় ৮টি পরিবারের জায়গা দখল করেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মাদরাসা কমিটির কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে কমিটি তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়। কিন্তু মুহতামিম ও তার ছেলে জোরপূর্বক বিতর্কিত নাজিমকে স্বপদে পুনর্বহাল করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদরাসার ম্যানেজিং ও কার্যকরী কমিটির সদস্য মাস্টার জমির হোসেন, সুরুজ আলী পীর, আফতাব উদ্দিন মেম্বার, আব্দুল মান্নান, তেরা মিয়া ভূলাই, ফারুক আহমদ, রইছ উদ্দিন, মাওলানা তৈবুর রহমান, মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন, জুনাব আলী, দিলবার আহমদ মেম্বার, তাহির মিয়া ও মাওলানা মইন উদ্দিন প্রমুখ।
অভিযোগের ব্যাপারে মাদরাসায় মুহতামিমের ছেলে মাওলানা ফখরুল ইসলাম বলেন, মাদরাসার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সত্য নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ হারানোর ভয়ে এমন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। সরেজমিন মাদরাসা পরিদর্শনের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।