দেশে পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় চাকুরি করে থাকেন। তাদের সমস্যাগুলো এক ও অভিন্ন। তারা অভিন্ন বৈষম্যের শিকার। বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থা। তাদের অনেকেই 'দিন আনে দিন খায়' শ্রমিকের ন্যায় জীবন-যাপন করেন। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের বরাবর এক কষ্টকর জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। বৈষম্যের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে শিক্ষার হাল শক্ত হাতে তারাই ধরে থাকেন।
বেসরকারি শিক্ষকেরা দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু, তাদের প্রতি রাষ্ট্রের তেমন সুদৃষ্টি দেখা যায়না বলে মনে হয়। চলমান করোনার দুঃসময়ে দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কারা পরিচালনা করছেন ? বেসরকারি শিক্ষকগণ করোনাকালে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে শিক্ষা একেবারে শিঁকেয় উঠে যেতো। তারা ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনোরুপ পূর্ব প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের পকেটের টাকায় অনলাইন ক্লাসের যন্ত্রপাতি কিনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার উদ্যোগে দশ হাজার শিক্ষককে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। দৈনিক শিক্ষার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আস্তে আস্তে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কেবল জনপ্রিয় নয়, করোনার মতো ভবিষ্যতের যে কোনো মহামারিতে বিকল্প শিক্ষা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে। সুদিনে-দূর্দিনে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকগণই শিক্ষার হাল ধরে থাকেন। অথচ করোনাকালে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ কেমন আছেন-সে খবরটি কে রাখে ? করোনার অজুহাত দেখিয়ে তাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি দাওয়া নিয়ে কেউ কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন।
বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে মাদরাসার শিক্ষকগণ ক্ষেত্র বিশেষ বেশি অবহেলিত। দৈনিক শিক্ষায় লেখালেখির সুবাদে অনেক মাদরাসা শিক্ষক প্রায়শ তাদের সমস্যা নিয়ে লেখার বিষয়ে অনুরোধ করেন। সারাদেশে সরকারি আলিয়া মাদরাসা তিনটি। গত দুই-তিন বছরে কয়েক শ' স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ করা হলেও দেশে কোনো মাদরাসা সরকারিকরণ করা হয়েছে বলে শুনিনি। আসলে মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগি করতে হলে এই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার একান্ত প্রয়োজন। মাদরাসার কারিকুলাম ও সিলেবাস ঢেলে সাজাতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করে তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। বহুদিন ধরে টাইমস্কেল বন্ধ থাকার পর বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর গ্রেড চালু করা হয়েছে। এটি নিয়ে বিতর্ক ও অসন্তোষের শেষ নেই। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ পর্যায়ক্রমে দু'টি উচ্চতর গ্রেড পাবার কথা থাকলেও আপাত প্রথম উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়টি অবারিত হয়েছে। দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেডের বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। যে সব শিক্ষক-কর্মচারী ইতোমধ্যে দু'টি উচ্চতর গ্রেড পাবার শর্ত পূরণ করেছেন অর্থাৎ যারা ১০ বছর ও ৬ বছর চাকুরিকাল অতিক্রম করেছেন, তারা কেন দু'টি গ্রেড পাবার আবেদন করতে পারছেন না ? দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেডের বিষয়টি এখনি উন্মুক্ত না করলে অনেকেই সেটি পাবার আগে অবসরে চলে যাবেন।
উচ্চতর গ্রেড বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে কেবল স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীগণ প্রথম উচ্চতর গ্রেডের আবেদন করতে পারলেও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীগণ সে সুযোগ থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন। এর কারণ মোটেও বোধগম্য নয়। মাদরাসার জন্য আলাদা অধিদফতর করা হয়েছে। তারা কী করেন ? মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর গ্রেডের বিষয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন না কেনো ?
মাদরাসা শিক্ষকদের অনেকে এ বিষয়ে কিছু লেখার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন। দয়া করে তাদের উচ্চতর গ্রেড অবিলম্বে দেবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদরাসা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সবিশেষ সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।