দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : উত্তরপ্রদেশে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া মাদরাসা শিক্ষা আইনকে ‘অসাংবিধানিক ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পরিপন্থী’ বলে গত ২২ মার্চ নির্দেশ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট। শুক্রবার সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিলো শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এ বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, মাদরাসা বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লঙ্ঘন করছে বলে এলাহাবাদ হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা সঠিক নয়।
লোকসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার ও শাসকদল বিজেপিকে বিড়ম্বনায় ফেলল বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের গতকালের নির্দেশের ফলে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘মূল স্রোতে’ অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রক্রিয়া উত্তরপ্রদেশ সরকার শুরু করেছিল, তা স্থগিত হয়ে গেল। সেই সঙ্গে সরকারি অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রেও মাদরাসারগুলোর কোনও বাধা রইল না। ফলে আপাতত স্বস্তি পেলেন ১০ হাজার মাদরাসা শিক্ষক ও ১৭ লাখ পড়ুয়া।
সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত মুলায়ম সিংহ যাদব মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কার্যকর হয়েছিল ‘উত্তরপ্রদেশ মাদ্রাসা বোর্ড শিক্ষা আইন’। ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ‘বিজেপি-ঘনিষ্ঠ’ অংশুমান সিংহ রাঠৌর। আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিলো, ওই আইন অবৈধ। এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরি ও বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থীর বেঞ্চ সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ার ফলে উত্তরপ্রদেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদরাসাগুলোর সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছিল।
আদিত্যনাথের সরকার কয়েক বছর মাদরাসা শিক্ষাকে ‘মূল শিক্ষাব্যবস্থা’র অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি প্রক্রিয়া শুরু করতে সক্রিয় হয়েছে। সরকারের দাবি, উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসাগুলোর পড়ুয়াদের অঙ্ক ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়ের পাঠ দিতেই এই উদ্যোগ। পাশাপাশি, গত বছর উত্তরপ্রদেশের মাদরাসাগুলোর বিদেশি অনুদানের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের গতকালের স্থগিতাদেশের ফলে যোগী সরকারের পদক্ষেপ করতে অসুবিধা হবে বলেই আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মাদরাসা বোর্ডের অনুমতি ছাড়া চলা সব মাদরাসা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিলো- বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য পড়িয়ে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মূলস্রোতে শামিল করার বদলে এই ধরনের মাদরাসায় তাদের শুধু ধর্মীয় শিক্ষায় আবদ্ধ রাখা হচ্ছে। এতে কিছু ক্ষেত্রে এক ধরনের মৌলবাদী চিন্তাধারারও প্রসার ঘটে। এই নিয়ে হইচই হওয়ায় পরে অবশ্য কথার ‘অপব্যাখ্যা’ হচ্ছে দাবি করে তিনি পিছিয়ে গিয়েছিলেন।
সূত্র: আনন্দবাজার