মাদরাসা শিক্ষা: মুখোমুখি জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও জেনারেল টিচার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাদরাসা শিক্ষা একটি বিশেষায়িত শিক্ষা। এটি কেবল আরবী ফার্সি কিংবা বাংলা ভাষা শিক্ষা নয়। মাদরাসা ছাত্ররা পরিপূর্ণ ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি বাড়তি ২০০ নম্বরের পেপারসহ সাধারণ শিক্ষার সবকিছু পড়ালেখা করে। তারা বিসিএসে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে সরকারী চাকরি পায়। তবে সাধারণ শিক্ষিত ব্যক্তি আলেম ও ইসলামী স্কলার না হয়ে মাদরাসার বিশেষ পদগুলোতে কোন দিনই সফলভাবে সেবা দিতে পারে না।

এ জন্য মাদরাসার লাইব্রেরিয়ান পদে কেবল সাধারণ শিক্ষিত কিংবা ব্যবহারিক ভাষা জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ কিছুতেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ ইসলামী শরীয়া, কুরআনিক সায়েন্স, ফেকাহ ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক পারদর্শী লোক ছাড়া মাদরাসার লাইব্রেরিয়ান হতে পারে না। যে সিদ্ধান্ত এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। একশ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী লোক এই বাজে সিদ্ধান্ত তরান্বিত করার জন্য নানাভাবে বক্তৃতা দিয়ে, মিডিয়ায় কথা বলে এবং পত্রিকায় কলাম লিখে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এ বিষয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। আলেম ওলামা পীর মাশায়েখগণ এসব বরদাশত করবে না। মাদরাসা শিক্ষার স্বার্থ দেখার একক পেশাদারি সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। গতকাল এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী এসব কথা বলেন।

গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এরমধ্যে দুটি দাবি উদ্ভট, অযৌক্তিক ও অবান্তর বলে মন্তব্য করেছে মাদরাসা শিক্ষক কর্মচারীদের পেশাজীবী অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন ও মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বিবৃতিতে আরো বলেন, এদেশের মাদরাসাসমূহ আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, বুজুর্গানে দীন, ইসলামী গবেষক ও চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তাদের উদ্দেশ্য একটিই- প্রকৃত নায়েবে রাসূল, শরীয়া বিশারদ, ইসলামবিষয়ক বিজ্ঞানী ও ইসলামের সেবক তৈরি করা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত মাদরাসার প্রশাসনিক জিম্মাদার তথা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহসুপার, প্রধান শিক্ষক ইত্যাদি মাদরাসা শিক্ষিত আলেমরাই হয়ে আসছেন। এমনকি ১৭৮০ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ ২৪০ বছর যাবতই মাদরাসা পরিচালনা ও প্রশাসন ওলামায়ে কেরামের হাতে রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষিতদের মাদরাসার দায়িত্বে নিয়োগের দাবি উঠেছে। যা নিঃসন্দেহে মাদরাসা ধ্বংসের একটি হীন চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতে যেমন অনেক জায়গায় সরাসরি মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে সরাসরি বন্ধ না করে ভেতর থেকে মাদরাসাকে অন্তঃসারশূন্য করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। অথচ এদেশে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব সাধারণ শিক্ষিতরা যেভাবে পালন করছেন, ঠিক এভাবেই মাদরাসা শিক্ষার প্রশাসনিক দায়িত্ব মাদরাসা শিক্ষিতদের হাতেই থাকা সমীচীন। নেতৃদ্বয় বলেন, সাধারণ শিক্ষিতরা মূলত সাধারণ চাকরি নেওয়ার জন্য লেখাপড়া করেছিলেন।

দেশে কর্ম সংস্থান না থাকায় কিংবা তারা কোন উপযুক্ত স্থানে নিযুক্ত হতে না পারায় মাদরাসায় চাকরি নিয়েছেন। এতে তাদের ইসলামী শিক্ষার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। মাদরাসা ব্যবস্থার প্রতি শুকরিয়া জানানো উচিত। কোনক্রমেই তাদের উচিত হবে না, মাদরাসা শিক্ষার হর্তাকর্তা হওয়ার চেষ্টা করা। কেননা তারা একমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত। অথচ মাদরাসা শিক্ষিতরা বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষিত নাগরিকদের সমপরিমাণ বরং আরো বেশি লেখাপড়া করে সাধারণ শিক্ষার সনদও লাভ করেছেন। বর্তমানে তারা বিশেষ লেখাপড়ার পাশাপাশি মাদরাসার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সক্ষম।

জমিয়াত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক উত্থাপিত দাবিসমূহের একটি হচ্ছে, মাদরাসার গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে জেনারেল শিক্ষিতদের আবেদনের সুযোগ দান। এটি একটি অযৌক্তিক অবান্তর দাবি। কেননা মাদরাসায় কুরআন হাদীস, উসূল ফেকাহ, বালাগাত, মানতেক, ফারায়েজ, উসুলে তাফসির, উসুলে তাফসির বিভাগের উচ্চতর গবেষণামূলক রেফারেন্স গ্রন্থাদি আরবী ফার্সী ভাষায় রচিত। তাছাড়া আরবী সাহিত্য ও ব্যাকরণ বিভাগের উচ্চতর গবেষণা গ্রন্থসমূহ আরবী ভাষায় রচিত। এসব কিতাব সজ্জিতকরণ, বিন্যাস, অনুসন্ধান, সরবরাহকরণ ইত্যাদিতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানী গ্রন্থাগারিক প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষিত লোকের পক্ষে একাজটি সম্পাদন করা মোটেও সম্ভব নয়। কেবল ব্যবহারিক আরবী জানা ব্যক্তির পক্ষেও এ পদ শোভা পায় না। তার জন্য মাদরাসা শিক্ষিত হওয়া আবশ্যিক।

বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক এ দাবি একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ। দেশের মাদরাসা শিক্ষার সাথে জড়িত আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, ইসলামী বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ধর্মপ্রাণ মানুষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেবে না। আমরা মনে করি, সরকারের সাথে আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ ও তাদের কোটি কোটি ভক্ত অনুসারীর সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরির জন্যই একটি মহল এসব অবান্তর চেষ্টা করছে। আমরা সকলের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়সহ শিক্ষা পরিবারের সকল স্তরের দায়িত্বশীলগণের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে, মাদরাসা শিক্ষার বাস্তবতা উপলব্ধি করে তারা পরবর্তী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব, ১৪ জানুয়ারি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021369457244873