মাদ্রাসা অধিদপ্তর ভোগান্তি বাড়িয়েছে : স্বাশিপ-মোদার্রেছিনের সাক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির কাছে এবার মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: বিল্লাল হোসেনের জামায়াত কানেশনসহ নানা অনিয়মের লিখিত সাক্ষ্য দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতিকল্পে ও শিক্ষকদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে আলাদা অধিদপ্তর করলেও ডিজি বিল্লালের স্বেচ্ছাচারিতায় সেই উদ্দেশ্য ব্যহত হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তারা বলেছেন, ডিজি বিল্লাল মানুষকে মানুষ মনে করেনা। অধিদপ্তরের বিএনপিপন্থি পরিচালক ড. মোহাম্মদ ছরোয়ার আলমকে সব মাদ্রাসায় নিয়োগ বোর্ডে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। 

তদন্তের দ্বিতীয় দিন সোমবার (৪ জুন) কমিটির দুই সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ ও যুগ্ম-সচিব মো: এনামুল হকের কাছে শিক্ষক নেতারা মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পর শিক্ষক নেতারাও জামায়াত নেতার কামাল উদ্দিন জাফরির সঙ্গে মহাপরিচালকের বৈঠকের খবরকে সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

২ জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার প্রথম দিন তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য নেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। প্রথমদিন রাজধানীর ইস্কাটনে বোরাক টাওয়ারে অবস্থিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে সাক্ষ্য নিলেও সোমবার (৪ জুন) সচিবালয়ের পরিবহনপুলে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগে শিক্ষক নেতাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়। মাদ্রাসা অধিদপ্তরের জামায়াতীকরণ ও অনিয়মের অভিযোগ তোলা শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা। শিক্ষক নেতারা লিখিতভাবে কমিটির কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সাক্ষ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহম্মদ আজিজুল ইসলাম, স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জেহাদী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমেদ মোমতাজী। 

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি জানিয়েছি দৈনিকশিক্ষা ও দৈনিক জনকন্ঠের খবরে জেনেছি মহাপরিচালক যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলার আসামীও ওই জামায়াত নেতা। মহাপরিচালকের পদে থেকে এভাবে উনি (মহাপরিচালক) মিটিং করতে পারেননা। এটা অবশ্যই উদ্বেগের। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে আজিজুল ইসলাম অবিলম্বে মহাপরিচালকে পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান। 
শাহআলী (রাহ.) ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম সাইফুল্লাহ বলেন, তদন্ত কমিটির সঙ্গে সচিবালয়ে তার দেড়ঘন্টা কথা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তার কাছ থেকে মাদ্রাসার ডিজির পাঁচ লাখ ঘুষ কোন কোন শিক্ষকের কাছ থেকে নিয়েছেন, সেইসব শিক্ষকের নাম লিখে নিয়েছেন। বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য উচ্চ আদালতের আদেশের কপি দেখেছেন। মাদ্রাসা শিক্ষক আফজালের নানা বিষয় সর্ম্পকে মৌখিক ও লিখিতভাবে কমিটিকে জানানো হয়েছে। মারধরসহ জামায়াত-শিবির-জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তোলার বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়েছে।

নজরুল ইসলাম দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, অধিদপ্তরের কার্যালয়ে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বেয়াই জামাত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে গোপন বৈঠকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা আমরা জানিয়েছি। একজন সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সরকারীর অফিসে বসে একজন চিহিৃত স্বাধীনতা বিরোধীর এভাবে গোপন বৈঠক কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাফরি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে নরসিংদীর ছাত্রলীগের একজন নেতাকে নির্মমভাবে খুন করিয়েছেন। ওই খুনের মামলা এখনও চলমান। 

স্বাশিপের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন এই পদে আসার পর থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। 
ডিজি অফিসকে ঘিরে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মাদ্রাসার বহু শিক্ষক নাজেহাল হয়েছেন। মহাপরিচালক নিজেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক শিক্ষককে অপদস্ত করেছেন। 

সরাসরি অপসারণ দাবি না করলেও গোপন বৈঠক করলে সরকারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের মহাসচিব শাব্বির আহমেদ মোমতাজী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি আগেও যা বলেছি সাক্ষ্যতেও তাই বলেছি। ‘ঘটনা জানার পর আমি মহাপরিচালকে ফোন করেছিলাম। মহাপরিচালক আমাকে বলেছেন, ‘তার দরজা সবার জন্য খোলা। জামায়াত নেতা যদি তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসে তাহলে আসতেই পারেন।’ 
মাদ্রাসা অধিদপ্তরর যেমন চলা উচিত তেমন চলে না। পৃথক অধিদপ্তর করায় লাভের চেয়ে লস বেশি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন মোমতাজী। 

মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন ব্যক্তিগতভাবে সৎ, কিন্তু একটি নতুন প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো ক্যাপাসিটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মোমতাজী তদন্ত কমিটিকে বলেছেন। 

এর আগে এর আগে ২৮ মে দৈনিক শিক্ষায় ‘জামাত নেতা জাফরির সঙ্গে মহাপরিচালকের গোপন বৈঠক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই তোলপাড় শুরু হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033590793609619