মাদরাসা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বৈষম্য

ফিরোজ আলম |

মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও  নীতিমালা গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে।   তাতে কিছু বৈষম্য, সমস্যা ও অসঙ্গতি রয়েছে। 

এগুলো হলো : ক. জনবল  কাঠামোর  ৩ পৃষ্ঠায় দাখিল  স্তরে ২৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে সুপার, সহসুপারসহ মোট ৬ জন হুজুর। এই স্তরে আরবি বিষয় ৫টি যথা কোরান, হাদিস, আরবি ১ম ও ২য়, আকায়েদ।অর্থাৎ ৫টি বিষয়ে হুজুর নিয়োগ ৬ জন। অন্যদিকে জেনারেল বিষয় ১৪টি ( বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া), নিয়োগ হবে আটজন। হুজুরদের হিসেব অনুযায়ী যা দরকার ছিল ১৪ জন।এতে জেনারেল টিচারদেরকে অনেক ক্লাস নিতে হবে।

খ• আলিম স্তরে মোট পদ ৩৪ টি। যার মধ্যে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ মোট হুজুর ৬ জন, এই স্তরে আরবি বিষয় আছে ৭টি। যথা কোরান, হাদিস, ফিকাহ ১ম ও ২য়, আরবি ১ম ও ২য়, বালাগাত।অন্যদিকে জেনারেল বিষয় (বিজ্ঞান বিভাগ বাদে) বাংলা ১ম ও ২য়, ইংরেজি ১ম ও ২য়, ইসলামের ইতিহাস, পৌরনীতি ১ম ও ২য়, আইসিটি, অর্থনীতিসহ মোট ৯ টি, শিক্ষক ৭ জন। আরবি বিষয় অনুযায়ী যা দরকার ছিল ১০ জন। 

গ• পৃষ্ঠা ৩ ,৬ এর ঘর আলিমে, পৃষ্ঠা ৫, ৬ এর ঘর ফাজিলে জেনারেল প্রভাষক ও  সহকারী অধ্যাপকে (মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান) প্রতি বিষয়ে এক জন শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হলেও পৃষ্ঠা ৬, ১৪ এর ঘরে কামিল স্তরে প্রতি বিষয়ে একজন করে নিয়োগ হবে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি।

ঘ• সারা দেশে ৯১৩৭ টি মাদরাসার মধ্যে ৫২টি মাদরাসায় আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স কোর্সের অনুমতি দিয়েছে এবং আরবি বিষয় সমূহের চাকরিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদনও করতে পারবে উল্লেখ করেছে (১৬ পৃষ্ঠা, ১ এর ঘর) কিন্তু অনার্স কোর্সের জন্য একজন জনবল নিয়োগের কথাও উল্লেখ করা হয়নি।  

ঙ• জনবল কাঠামোর ৯ পৃষ্ঠার ১১.৩ এর (খ) এ বলা হয়েছে ২০০৬ খিস্টাব্দের আগে যারা কামিল পাস করেছে, তারা বিএড না করেও বিএড স্কেল পাবে। কিন্তু যারা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছে, তারা বিএড না করলে, বি এড স্কেল পাবে না।অথচ নিন্দুকেরা বলে কামিল মাস্টার্স সমমান।

চ• ৯ পৃষ্ঠায় ১১.৪ এবং ১৬ পৃষ্ঠার ৩ এ বলা হয়েছে প্রভাষকদের মধ্যে যারা ৮ বছর পূর্ণ করবে তারা ৫: ২ হারে সহকারী অধ্যাপক হবে অর্থাৎ ৬ নং গ্রেড, বেতন ৩৫,৫০০ টাকা।বাকি প্রভাষকরা যোগ্যতা থাকার পরও ১০ বছর পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২ বছর ওই ৯ম গ্রেডেই থাকবে, বেতন ২৩,৫০০। এই ২ বছর একই যোগ্যতার দুই জনের বেতন পার্থক্য ১২,৫০০ টাকা। ১০ বছর পুরণ হওয়ার পর ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেড আসবেন বেতন ২৪,৫০০। অর্থাৎ ৮ বছর চাকরির পর একই যোগ্যতাসম্পন্ন একজনের বেতন ৩৫৫০০  আরেক জনের ২৩৫০০,এভাবে ১৬ বছর চাকরি পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত মাত্র ১০০০ টাকা বেশি পেয়ে অন্যজনকে অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে ১০ বছর চাকরির পর সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে আসবেন যার বেতন হবে ১৭,৫০০ থেকে বেড়ে ২৩,৫০০ অর্থাৎ ১০ বছর চাকরির পর প্রভাষকের বাড়ল মাত্র ১০০০ টাকা, সহকারী শিক্ষকের ৬,০০০ টাকা। 

ছ• বর্তমানে মাদরাসাতে অনেক প্রভাষক আছেন, যারা ১০ বছর চাকরির পর ৯ম গ্রেড থেকে ৭ম গ্রেডে চাকরি করছেন।একই প্রতিষ্ঠানে আরেকজন ১০ বছর পর ৮ম গ্রেডে চাকরি করবেন, একজন ২৯,৫০০ টাকা, আরেকজন ২৪,৫০০ টাকা পাবেন। 

জ• সরকার বলে কামিল মাস্টার্স সমমান। আলিম, ফাজিল, কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপাল পদে চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হল (১৭ পৃষ্ঠার ৯,১৬ পৃষ্ঠার ১,১৭ পৃষ্ঠার ৬ এর ঘর) কামিল/স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমমান ডিগ্রি তার মানে বোঝায় প্রিন্সিপাল/ভাইস প্রিন্সিপাল পদে স্যার ও হুজুররা আবেদন করতে পারবেন কিন্তু (১৭ পৃ: ৯, ১৬ পৃ: ৬ এর ঘর) অভিজ্ঞতায় দেখা যায় আরবি বিষয়/ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের হুজুররা ছাড়া অন্য কোন জেনারেল শিক্ষক প্রিন্সিপাল পদে আবেদনই করতে পারবে না। যদি হুজুর-স্যার ব্যবধান না রেখে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হওয়া যায়, তাহলে প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপ্যাল কেন হওয়া যাবে না।

ঝ• ১৯ পৃ: ১৬ নং এবং ২৩ পৃ: ৩৫ নং এ বলা হয়েছে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে কামিল পাস ছাড়া হবে না।কামিল মাস্টার্স সমমান হলে, কামিল পাসে গ্রন্থাগারিক ও সহ গ্রন্থাগারিক হতে পারলে মাস্টার্স পাস করে তা পারবে না কেন?

ঞ• ১০ পৃ: ১৩ নং এ বলা হয়েছে একই দিনে এমপিওভুক্ত হলে যার বয়স বেশি তিনি পদান্নতি পাবেন, এই ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচিত হবে না। বিষয়টি মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য। সেরা ছাত্রটিকে শিক্ষকতায় প্রাধান্য না দিলে শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে যাবে। এই প্রথা বাতিল করা অত্যাবশ্যক।

ট• মাদরাসা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণকারী, মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব কামিল পাস নন, তথাপিও তারা যদি জেনারেল হয়ে মাদরাসা পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রটি কেন প্রিন্সিপ্যাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল হতে পারবে না? কার স্বার্থে হুজুরদের জন্য প্রিন্সিপালের কোটা প্রথা রাখা হয়েছে? এভাবে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত হলে মাদরাসা শিক্ষকরা তা মেনে নেবে না। 

 লেখক : প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান, আয়শা (রা:) মহিলা কামিল মাদরাসা, লক্ষ্মীপুর।

 

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055279731750488