মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের শিক্ষক বাড়ানো জরুরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। এই পেশায় মেধাবীদের আগমন যত বাড়িবে, ততই বাড়িবে শিক্ষার মান। একইসঙ্গে পর্যাপ্ত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। যিনি যে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিবেন, তাহার সেই বিষয়ের উপর মৌলিক জ্ঞান থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হইল, শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞানের ভিত্তি রচিত হয় যে পর্যায়ে, সেই মাধ্যমিক পর্যায়েই নাই চাহিদামাফিক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। বিশেষত বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ ও হতাশাব্যঞ্জক। সমপ্রতি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে নন-সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকৃতি ও প্রভাব বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। তাহাতে দেখা যায়, এই ধরনের শিক্ষকগণ বহুদিন ধরিয়া বিজ্ঞান পড়াইলেও তাহারা নিজেরাই অনেক বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অনেক মৌলিক বিষয়ে তাহাদের দুর্বলতা ও অজ্ঞতা দুর্ভাগ্যজনক। তাহাদের পাঠদান পদ্ধতি নিয়াও আছে প্রশ্ন। এমতাবস্থায় এইসকল শিক্ষক দ্বারা  বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার কতটা ঘটিবে, তাহা সহজেই অনুমেয়।

এখন প্রশ্ন হইতে পারে, নন-সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষকদের দিয়া কেন বিজ্ঞানের ক্লাস গ্রহণ করা হয়? আসলে ইহার জন্য দায়ী এমপিও নীতিমালা। এই নীতিমালায় বলা হইয়াছে, একটি বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞান মিলাইয়া সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের দুইজন শিক্ষক থাকিবেন। অথচ ষষ্ঠ হইতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত গণিত, উচ্চতর গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়ন মিলাইয়া ১৮টি ক্লাস রহিয়াছে। এতগুলি ক্লাস মাত্র দুইজন শিক্ষক দ্বারা নেওয়া সম্ভব নহে। এইজন্য নন-সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষকদের দ্বারা ক্লাস নেওয়া হয়। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে আবার গণিতের শিক্ষক থাকিলেও নাই বিজ্ঞানের শিক্ষক। সেইখানে এই সংকটটা আরো বেশি। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে আবার খণ্ডকালীন বিজ্ঞানের শিক্ষক কাজ করেন, যাহার অধিকাংশই স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণহীন। ফলে বিজ্ঞানের গুণগত পাঠদান ব্যাহত হইতেছে। ‘প্রফেশনাল লার্নিং অব সেকেন্ডারি সায়েন্স টিচার্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায়ও দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণিতে বিজ্ঞানের ক্লাস নেন ৫৫ শতাংশ নন-সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষক। সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে এই হার যথাক্রমে ৪৮.৩, ২৫.৯, ৯.৮ এবং ১৪.৪ শতাংশ। বিশেষত নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন নাই, এমন শিক্ষক বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করিবেন, তাহা একেবারেই মানিয়া নেওয়া যায় না।

আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে বিজ্ঞানের পাঠদান আরেকটি কারণে অবহেলিত। তাহা হইল— সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষকদের ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ বিজ্ঞানের চাইতে গণিতের ক্লাস নেওয়াকেই প্রাধান্য দেন। ইহার মূল কারণ হইল— গণিত পড়াইলে প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ের মাধ্যমে বাড়তি অর্থ উপার্জন করা যায়। আমরা বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক তৈরির কথা বলি, কিন্তু তৃণমূলে বিজ্ঞানচর্চার এই দুর্দশা কাম্য নহে। এইজন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, বিশেষত বিজ্ঞানের শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াইতে হইবে। আশার কথা হইল, নূতন এমপিও নীতিমালায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। ইহার বাস্তবায়ন এখন একান্ত কাম্য।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003018856048584