মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদমর্যাদা

ওমর ফারুক |

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বিদ্যমান গ্রেড উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

অথচ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সকল পর্যায়ে কর্মরত গণকর্মচারীদের পদমর্যাদা/গ্রেড উন্নীত হলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও গ্রেড উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ নেই!

যদিও আমরা খুবই আনন্দিত এটা জেনে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন কর্মরত কর্মচারী ভাই-বোনদের বিদ্যমান পদের আপগ্রেডেশান/মর্যাদা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

আমাদের জানা মতে,তিনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) রাষ্ট্রের গণকর্মচারীদের বিদ্যমান পদের আপগ্রেডেশনের/মর্যাদা বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন বেশ কিছুদিন হলো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বিদ্যমান পদের আপগ্রেডেশন (উন্নয়ন) ঘটছে। এটা নিঃসন্দেহে আশার আলো।কেননা,রাষ্ট্র ইতোমধ্যে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখছেন। যা অবশ্যই সম্ভব বলে আমরাও বিশ্বাস করি।

তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী কেবলমাত্র সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদমর্যাদা /বিদ্যমান পদের পদনাম পরিবর্তন এবং দীর্ঘদিনে ধরে বিদ্যমান গ্রেডের উন্নয়ন হচ্ছে না কেনো?

প্রশ্ন হচ্ছে..শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও গ্ৰেড উন্নয়নে বাধা কোথায়?

আমরা জেনে আশ্চর্য হয়েছি,সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত প্রস্তাবিত (এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড ধরে চার স্তরীয়) একাডেমিক পদসোপান দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত হওয়ার পর সেটি নিয়ে কাজ চলমান থাকা অবস্থায় উক্ত পদসোপানের ফাইল নাকি হারিয়ে গেছে! কিন্তু কী ভাবে? কারা করেছেন আর কেনোই বা এমন করছেন? যারা এমনটি করেছেন,আমাদের ঠকিয়ে বা বঞ্চিত করে তাদের লাভ কোথায়? এই প্রশ্নগুলো বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে!

আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে..মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো অনুশাসন যেখানে সকল গণকর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা, সেখানে সরকারি মাধ্যমিক সেক্টরে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না কেনো?

আবার একই মন্ত্রণালয়ের অধীন এমন কী একই অধিদপ্তরের অধীন কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক তাদের পদমর্যাদা এবং বিদ্যমান গ্রেডের উন্নয়নের প্রক্রিয়া যেখানে চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে অদ্যাবধি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না কেনো? 

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ কারা মোকাবিলা করছেন? আর কারা বাস্তবায়ন করবেন-এই নতুন কারিকুলাম? কারা জাতির ভবিষ্যৎ (আজকের ছাত্র-ছাত্রীদের) আধুনিক মানের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টারত? এই বিশাল দায়িত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ মাউশি অধিদপ্তর কী কিছুসংখ্যক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর নন শিক্ষক-কর্মচারীদের দিয়েই বাস্তবায়ন করতে চাযন? অবশ্য যদি তারা তা করতে পারেন,তবে আমাদের কোনো কথা নেই, তারা করে দেখান! আর যদি রাষ্ট্র তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আমাদের অধিদপ্তর এবং রাষ্ট্রের সচেতন সুধীমহল মনে করেন নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষককে প্রয়োজন হবে এবং শুধু প্রয়োজন হবে না; শিক্ষকরা এই কারিকুলাম বাস্তবায়নে প্রাণভোমরার ভূমিকা পালন করবেন,যা খুবই স্বাভাবিক। তবে অবশ্যই শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক সরকারি মাধ্যমিকে কর্মরত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমরা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সকল পর্যায়ের গণকর্মচারীদের জন্য দেয়া সুযোগের সমান (বিদ্যমান পদের আপগ্রেডেশন/ মর্যাদা বৃদ্ধি) সুযোগ-সুবিধা (শতভাগ) পাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করি। 

অবিলম্বে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সমগ্রেড ও নিম্নগ্রেডের অন্যান্য কর্মচারীরা তাদের পদের আপগ্রেডেশন করে নবম এবং তদূর্ধ্ব পদে তাদের মর্যাদা এবং আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করলেও (উল্লেখ্য,এখানে আপনাদেরকে অবগত করানো জরুরি যে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতন গ্রেডের বিষয়টি গত ৫০ বছরে কী অবস্থায় চলছে! 

আপনারা অবগত আছেন,বাংলাদেশের প্রথম পে-স্কেল গঠিত হয় ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। সেই পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর (তখন পিটিআই ইন্সট্রাকটর ও সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক এই দু'টি একই পদমর্যাদার ছিলো এবং অভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ হতো) পদটি তৎকালীন সময়ে ছিলো-ষষ্ঠ গ্রেডভুক্ত পদ। (উল্লেখ্য, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পে-স্কেলে গ্রেড সংখ্যা ছিলো ১০টি।)সেই পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের সমগ্রেডভুক্ত আরও ছিল থানা শিক্ষা অফিসার, থানা সমাজসেবা অফিসার এবং সাব-রেজিস্ট্রার পদসমূহ।

গঠিত পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর পদটি ১০ম গ্রেডভুক্ত করা হয় এবং আগের সমগ্রেডভুক্ত অন্যান্য পদসমূহ যেমন-থানা শিক্ষা অফিসার, থানা সমাজসেবা অফিসার এবং সাব-রেজিস্ট্রার পদকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে ১১তম গ্রেডভুক্ত করা হয়। আবার, ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে পে-স্কেলে সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর পদটি যথারীতি ১০ম গ্রেডেরই থাকে এবং ১১তম গ্রেডের সাব-রেজিস্ট্রার পদটিকে সহকারী শিক্ষক/পিটিআই ইন্সট্রাকটর পদের সমমান (১০ম গ্রেডভুক্ত) করা হয় এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদটি যথারীতি ১১তম গ্রেডেই থাকে।
কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার পদটিকে ১১তম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।

বড়ই আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত পে-স্কেলে। এখানে এসে সহকারী শিক্ষক পদটি ১০ম গ্রেডেই বহাল থাকে। কিন্তু পিটিআই ইন্সট্রাকটর পদটি (যা সহকারী শিক্ষকদের সমগ্ৰেডের এবং পারস্পরিক বদলিযোগ্য পদ ছিলো এবং একই সঙ্গে অভিন্ন নিয়োগে নিয়োগ পেত। ৯ম গ্রেডভুক্ত প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদে উন্নীত করা হয় এবং পূর্বের ১১তম গ্রেডের উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটিকে এক ধাপ ওপরে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং একই পে-স্কেল বর্ষে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদটিকে আরেক ধাপ ওপরে নবম গ্রেডে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদে উন্নীত করা হয়।একইভাবে ২০০৫ সালে গঠিত পে-স্কেলে সহকারী শিক্ষক পদটি যথারীতি ১০ম গ্রেডেই বহাল থাকে এবং উপরে উল্লিখিত পদসমূহও নবম গ্রেডেই বহাল থাকে।

সুতরাং, একথা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া যায় যে, রাষ্ট্র সরকারি মাধ্যমিক তথা মাধ্যমিক শিক্ষকদের মর্যাদা না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়েছে অথবা দীর্ঘ ৫০ বছরেও শিক্ষকদের মর্যাদা কোনরূপ বাড়ায়নি বা বাড়ানোর মতো দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ ও দেখা যাচ্ছে না! একই পদে পড়ে থাকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের (১০ম গ্ৰেড) পদের আপগ্রেডেশান করার (নবম গ্রেডে উন্নীত করার) কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উইংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

লেখক : ওমর ফারুক, সহকারী শিক্ষক (বাংলা) সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.16320991516113