স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রাথমিকে নেই কোনো ক্যাডার সার্ভিস। অথচ হাঁস-মুরগি, গাছপালার জন্যও ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে। দেশে তৃণমূলের শিক্ষার ভিত মজবুত করার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা নামে বিশাল জনগোষ্ঠীর মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকের মতো এত জনবল আর কোনো মন্ত্রণালয়ে নেই। সব মন্ত্রণালয়ের থেকে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সব পর্যায়ের কার্যক্রমের মধ্যে কঠিন হলো অবুঝ শিশুকে শিক্ষা দিয়ে মানব শিশুতে রূপান্তরিত করা।
বাড়িতে একটা ছোট্ট শিশু থাকলে সবার নজর থাকে তার ওপর। প্রাথমিক শিক্ষকদের অনুরূপভাবে অনেক শিশুর জন্য সদা সতর্কতার সঙ্গে দেখভাল করতে হয়। শিশুদের প্রতি ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা এই কঠিন কাজটি করে যাচ্ছেন। প্রাথমিকের মন্ত্রণালয় এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করলেও মাঝে মাঝে নানা অবহেলা পরিলক্ষিত হয়।
ভাবখানা এমন- শিক্ষার সব দায়িত্ব যেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যদের। এ মন্ত্রণালয়কে অনেকে অবুঝ শিশুদের মতো গুরুত্বহীন মনে করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও অবুঝ শিশুর মতো তাদের ভাবনার মাঝে আবদ্ধ।
শিক্ষক হিসাবে আমাদেরও উপলব্ধি করতে হবে, আমরা সবচেয়ে কঠিন শিক্ষাদানের কাজটি করে থাকি। সংশ্লিষ্টদেরও ভাবতে হবে, আমাদের মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
পাশাপাশি অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বহীন করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করাও কাম্য নয়। একজন কৃষকের সন্তান বাবা-মায়ের সাহচর্যে থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে ভালোভাবে পরবর্তী সময়ে কৃষিকাজ করে থাকেন। অনুরূপভাবে একজন সহকারী শিক্ষক দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন।
এর ফলে তার পদোন্নতির পথ সুগম হলে তার পক্ষে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। অথচ বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে ভাবনা সংশ্লিষ্টদের মাঝে দৃশ্যমান নয়। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি না পেয়ে অবসরগ্রহণ করছেন বা মারা যাচ্ছেন। চলতি দায়িত্বে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের ক্যাডারবিহীন পদোন্নতি চালু আছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!
শিক্ষকদের মনে প্রশ্ন- সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের চলতি দায়িত্ব খুব তাড়াতাড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসারে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়; অথচ চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষকরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত কেন? শতকরা ৩৫ ভাগ প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ চলছে। এর ফলে যোগ্যতাসম্পন্নরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অভিজ্ঞতাহীন প্রধান শিক্ষকে ভরপুর করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়কে।
ঢাকা শহরের শিক্ষকদের সারা দেশের শিক্ষকদের মতো পদোন্নতি ও পোষ্যের কোটা পাওয়ার অধিকার আছে। সে প্রেক্ষাপটে নীতিমালা ভঙ্গ করে আর বাইরের জেলা থেকে বদলি করে ঢাকা শহরের শিক্ষকদের অধিকার সংকুচিত না করার আহ্বান রইল। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে এ খাতের সব অনিয়ম-দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।