প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, মানসম্মত শিক্ষা দিতে শিক্ষকদের বেশি বেতন লাগে না, লাগে দেশপ্রেম। বেশি বেতন দিলে দেশপ্রেম বাড়বে, বেশি নিবেদিত হবে এই কথাটা আমি কখনও সত্য হিসেবে গণ্য করতে পারি না।
বুধবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা অফিসার, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষক যখন শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিবেদিত থাকেন, তার চিন্তায় চেতনায় যখন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া নিয়ে ভাবনা থাকে তখন আর কিছু লাগে না।
পার্থক্য বোঝাতে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের তুলনা তুলে ধরে বলেন, প্রাইমারি স্কুল এবং কিন্ডার গার্টেন স্কুলের মধ্যে পার্থক্যটা কী? কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের কি বেশি বেতন দেয়? তারা কি বেশি পড়াতে পারে? তারা কি বেশি উপযুক্ত?
তিনি আরও বলেন, আমাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতেই আজ এগিয়ে যাওয়া। আমরা শিক্ষকদের কার্যকর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে তারা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারে। তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা, দেশকে ভালোবাসা। যে কাজের মধ্যে ভালোবাসা নেই সে কাজ সুন্দর হবে না। কাজে নিবেদিত থাকলে ভালো সুযোগ সুবিধা তারা এমনিতেই পেয়ে যাবেন।
ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ কেমন হবে সেবিষয়ে বক্তব্য রাখেন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজান।
অন্যদিকে শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরিফা নাজমিন তার বক্তব্যে স্কুলে কিভাবে শিক্ষার্থী ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন।
শিক্ষার্থীদের হাতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পাঠ্য বই তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুদের হাতে পাঠ্য বই না ধরিয়ে দিয়ে কিছু মৌলিক শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। জীবনমুখী শিক্ষা, আচার আচরণ, আদব কায়দা শেখানো যেতে পারে। এছাড়া সু্বিধাবঞ্চিত শিশুদের একাডেমিক পড়ালেখার বাইরে কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে যাতে তারা বাকিটা জীবন ভালো থাকতে পারে।
অন্যদিকে প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, স্কুলের সময় কমানো, শহরের বিদ্যালয়গুলোতে উপবৃত্তির টাকা প্রদান ও ছাত্র-শিক্ষকের আনুপাতিক হার কমানো জরুরি বলে অভিমত দেন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম আল হোসেন। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল এডুকেশন ওয়াকিং গ্রুপের সদস্য সাব্বির বিন শামস।