প্রতিবছরের বাজেটেই শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরও এ খাতে বরাদ্দ ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু এত টাকা বরাদ্দ হলেও এর কার্যকর ব্যবহার নিয়ে সন্দিহান শিক্ষাবিদরা। এ জন্যই তাঁরা বারবার বলে আসছেন, শিক্ষায় সংখ্যাগত পরিবর্তন এলেও এর গুণগত মান বাড়ছে না।
এ প্রেক্ষাপটে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দিয়েছে, সেখানেও শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব, সঠিক পরিকল্পনা ও কঠোর নজরদারি। এটাই হবে এবারের আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জানা যায়, সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সব শিশুকে প্রাক-শৈশব উন্নয়ন ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। অধিকতর শিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অসমাপ্ত রাখা শিশুদের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে। আর এসব লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি রয়েছে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভাষা জ্ঞান ও গণিত জ্ঞানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভাষা ও গণিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তবে বর্তমানে শিক্ষা খাতে একাধিক প্রকল্প চালু থাকলেও তা শিক্ষার মান উন্নয়নে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
‘জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ২০১০’-এর সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের রেকর্ড খারাপ না। এর পরও তারা যে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের কথা বলেছে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষায় সংখ্যাগত উন্নয়ন হয়েছে, এবার মান বাড়াতে হবে। দুই মন্ত্রণালয়ের আরো সমন্বয় দরকার। শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ও স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা দরকার। আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সজাগ। শিক্ষায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রাধান্য থাকতে হবে, যাঁরা কমিটমেন্ট রক্ষা করবেন। আর প্রশাসনকে সেই নেতৃত্ব মেনে কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে স্কুল ফিডিং সব গ্রামে, আধামফস্বল শহর এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলগুলোতে পর্যায়ক্রমে সর্বজনীন করার কথা বলা হয়েছে।
জানা যায়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে এখন সবচেয়ে বড় বাধা অদক্ষ শিক্ষক। কারণ বর্তমানে চালু থাকা সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষকরা নিজেরাই বোঝেন না।
গত কয়েক বছর শিক্ষাব্যবস্থার গলার কাঁটা ছিল প্রশ্ন ফাঁস। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছেছিল। তবে ২০১৮ সালে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে সব পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছিল না। শুধু কঠোর নজরদারি আর নতুন কিছু ব্যবস্থায় প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল সর্বতোভাবে বন্ধ করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ