চাকরি বিজ্ঞপ্তির শুরু থেকে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে চলছে অপেক্ষা। এর মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেছে কিন্তু ফল প্রকাশ হয়নি। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবার থেকে বাচ্চা নিতে চাপ দিচ্ছে—কিন্তু চাকরি শর্তের জালে অনেকে বাচ্চা নিতে পারছেন না, আবার অনেকে নষ্ট করেছেন। এর ফলে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদের কয়েক হাজার চাকরিপ্রত্যাশী ।
তারা এ মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান, একইসঙ্গে আগামী সাত দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে আয়োজিত এক মানবন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন অনেক চাকরিপ্রত্যাশী।
মানবন্ধনে দিনাজপুর থেকে আসা তানিয়া মোস্তাকিম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদের জন্য ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সার্কুলার প্রকাশিত হয়। অনলাইনে আবেদন শুরু হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মার্চ এবং শেষ হয় ২০ এপ্রিল। তারপর দীর্ঘ ২ বছর ৯ মাস পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ধাপে ধাপে ২৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। কিন্তু ৩ মাস ২০ দিন পার হলেও চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হয়নি এখনো।
তিনি বলেন, ৭ হাজার ৬২১ জন প্রার্থী চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় আছেন, যাদের অধিকাংশই বিবাহিত। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দেড় বছরের প্রশিক্ষণের সময় অধিদপ্তর থেকে শর্ত প্রদান করা হয়—প্রশিক্ষণ চলাকালীন কোনো প্রার্থী গর্ভাবস্থা কিংবা ৩ বছর বয়সের কম কোনো ছোটো বাচ্চা থাকা যাবে না। এমন শর্তাজালে আটকা পড়েছে অধিকাংশ নারীর মাতৃত্ব। চূড়ান্ত ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা ও ফল প্রত্যাশীরা শুধুমাত্র নারী হওয়ায় অধিকাংশ নারীর সংসারে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এসব সমস্যার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনাতে বিঘ্ন ও মা-বাবা হওয়া থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। এছাড়া দুশ্চিন্তায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না অনেকে।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের চাকরি হোক বা না হোক। মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়াটা জরুরি। তাই আগামী ৭ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
একই দাবি জানিয়ে বগুড়া থেকে আসা বন্যা বলেন, একটি চাকরির প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ হতে যদি ৪-৫ বছর লাগে। তাহলে মানুষ বাকি কাজ কখন করবে। এই সময় ক্ষেপণ নারীদের জন্য যেমন যন্ত্রণার, তেমনি পুরুষদের জন্যও। তাই আমাদের ফলাফল দ্রুত প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অন্তত ১০০ জন চাকরি প্রত্যাশি উপস্থিত ছিলেন।