মামলার যুক্তিতর্ক শেষেই সাজা ঘোষণা নয়, পৃথক শুনানির নির্দেশনা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ফৌজদারি মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে দোষী সাব্যস্তের পরই আসামিকে শাস্তি দিয়ে থাকেন অধস্তন আদালতের বিচারক। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় নতুন একটি দিক যুক্তের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট।

সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যখন উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় তখন বিচারক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কয়েক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন বিচারক তার মনের এই কথাটি উন্মুক্ত আদালতে মামলার উভয় পক্ষের আইনজীবীদের জানাবেন। এরপর উপযুক্ত শাস্তি নির্ধারণের জন্য আসামির শাস্তির বিষয়ে পৃথক শুনানির জন্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একটি তারিখ ধার্য করবেন। সেই ধার্য তারিখের শুনানিতে আসামির সামাজিক অবস্থান, অপরাধের রেকর্ড, বয়স ও আর্থিক অবস্থার বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি ঘোষণার কথা বলা হয়েছে।

‘রাষ্ট্র বনাম মো. লাভলু’ মামলায় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা সার্কুলার আকারে জারি করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের অবহিত করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

রায়ের এই নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ফৌজদারি মামলায় আসামির শাস্তি নির্ধারণে আলাদা শুনানি করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নিম্ন আদালতের জন্য এখন বাধ্যতামূলক হবে। যদিও এ ধরনের পৃথক শুনানির ব্যবস্থা প্রচলিত আইনে নেই। এ কারণে এই রায়ের নির্দেশনা প্রতিপালন করা আইনগতভাবে কতটুকু সম্ভব সেটা নির্ধারণে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। কারণ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এ বিষয়টি আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত হওয়া উচিত।

সাবেক বিচারপতি ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, অপরাধের গভীরতার মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সাজার মেয়াদ নির্ধারণ করা উচিত। সেই দিক থেকে এ রায় যুগান্তকারী। দুই বছর আগে ‘আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র’ মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছিল, বাংলাদেশের বিচারকদের জন্য শাস্তি প্রদানের কোনো গাইডলাইন নাই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই শাস্তি প্রদানের নীতিমালা আছে। তাই শাস্তি প্রদানের জন্য বাংলাদেশে আইনসিদ্ধ নির্দেশিকা প্রয়োজন। অপরাধের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে এই নির্দেশিকা প্রণয়ন জরুরি। 

প্রসঙ্গত ধর্ষণ, খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন বিচারক। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে নতুন একটি দিক যুক্তের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। যেখানে চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য না করে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আসামির শাস্তি কী হবে সেটা নির্ধারণে পৃথক শুনানির জন্য ব্যবস্থা রাখা। সেই শুনানিতে অপরাধীর বয়স, চরিত্র, ব্যক্তি বা সমাজের প্রতি সংঘটিত অপরাধের প্রভাব, অপরাধী অভ্যাসগত, সাধারণ নাকি পেশাদার, অপরাধীর ওপর শাস্তির প্রভাব, বিচার বিলম্ব এবং দীর্ঘস্থায়ী বিচার চলায় কারাগারে আটক থাকায় অপরাধীর মানসিক যন্ত্রণার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। যাতে একজন অপরাধী নিজেকে সংশোধন ও সংস্কারের সুযোগ পান। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে শাস্তির বিষয়ে রায় দেবেন বিচারক। 

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, শাস্তি নির্ধারণের জন্য পৃথক শুনানির যে নির্দেশনা রায়ে বলা হয়েছে সেটা ভালো উদ্যোগ। তবে এর জন্য একটা নীতিমালা করতে হবে সরকারকে। কারণ নানা ধরনের অপরাধ রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় আমলে নিতে হবে বিচারকদের, যা নীতিমালায় থাকতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053489208221436