বাসাবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে জানিয়ে থানায় মামলা করতে যান দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার আলী। একই সময়ে থানায় উপস্থিত ছিল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় কথা-কাটাকাটি থেকে শিক্ষার্থীদের ওপরে চড়াও হয়ে হুমকি দেন তিনি।
এরপর কয়েক শ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে ঘিরে ধরেন ওই চেয়ারম্যানকে। তাদের তোপের মুখে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের মৌখিক ঘোষণা দেন তিনি। পরে শিক্ষার্থীদেরই করা একটি মামলায় থানা চত্বরে গ্রেফতার হন আফসার আলী।
গতকাল শুক্রবার রাতে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন। এবারই প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পক্ষে দায়ের করা ওই মামলার বাদী হয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অতর্কিত হামলা চালান। মারধর করে গুম করে ফেলার হুমকি দেন এবং মেয়েদের শ্লীলতাহানি ঘটান। তাঁদের হুমকি–ধমকিতে এলাকার কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।
মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তাঁর ব্যক্তিগত সচিব আবদুল বাশারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ জনকে।
শুক্রবারের ঘটনায় বোচাগঞ্জ পৌর শহরের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে পার্শ্ববর্তী এক উপজেলায় সপরিবারে আত্মগোপনে ছিলেন চেয়ারম্যান আফসার আলী। শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন বাড়ি ভাঙচুরের মামলা করতে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রতিটি মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত কার্যক্রম করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এটা আওয়ামী লীগের দেশ না, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ।
শিক্ষার্থীদের মুখে এমন কথা শুনে তাঁদের ওপর চড়াও হন আফসার আলী, হুমকি দেন শিক্ষার্থীদের। মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করলে বাইরে থেকে আরো কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে মাইক হাতে নিয়ে তিনি মৌখিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে পদত্যাগ করবেন বলে জানান। এ সময় বোচাগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনকারী সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থানায় এসেছিলেন। এ সময় থানায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তিনি মৌখিক পদত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের দায়ের করা একটি মামলায় চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।