মালয়েশিয়ায় নদী থেকে বাংলাদেশি ছাত্রের লা*শ উদ্ধার, র‍্যা*গিংয়ের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মালয়েশিয়ায় ১৮ সেপ্টেম্বর ইরফান সাদিক সামিন নামের এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মারা যায়। তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে বলা হয়। পরে একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর পরিবার ধারণা করছে, র‍্যাগিংসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে আত্মহত্যার প্ররোচনাও দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এমনকি তাঁকে নদীতে ফেলে দেওয়া হতে পারে।

ইরফান (২৪) মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশের কুচিং শহরে অবস্থিত সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়তেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের ম্যাপল লিফ ইন্ট্যারন্যাশনাল স্কুলে পড়তেন। ইরফানের পরিবারের প্রাথমিক অনুরোধে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।

ইরফানকে রায়েরবাজার গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর খালু আবু জাফর সিদ্দিক। তিনি আজ মঙ্গলবার বলেন, ইরফান যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেখানে বাংলাদেশি ছাড়াও পাকিস্তানি, ইরানি ও চীনা শিক্ষার্থীরা থাকতেন। তাঁদের কারও কারও দ্বারা তিনি বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়ে থাকতে পারেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ আসায় বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকারকে জানিয়ে তদন্তের জন্য ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হাইকমিশনকে বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক রাহাত বিন জামান মঙ্গলবার  বলেন, ‘র‍্যাগিংসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হয়ে থাকলে তা গুরুতর অভিযোগ। আর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী পড়ে। সে কারণেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। দেশটির সরকারের সঙ্গে বিষয়টি তুলে যথাযথ তদন্তের ব্যবস্থা করার জন্য হাইকমিশনকে বলা হয়েছে।’

প্রাপ্ত ভিডিও অনুযায়ী, অর্ধনগ্ন ইরফান কাউকে বলছে, ‘আমাকে ছুঁলে কিন্তু আমি পানিতে ঝাঁপ দেব।’ কে বা কারা ভিডিওটি করল, কারা ইরফানকে ওই অবস্থায় নিয়ে গেল, এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা।

ইরফানের মৃত্যু ও পরবর্তী ঘটনাবলি সম্পর্কে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়, তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মিশনের একজন কর্মকর্তাকে সারাওয়াক পাঠানো হয়। ওই কর্মকর্তা শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার স্থান পরিদর্শন করেন। তিন দিন অবস্থান করে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পুলিশ ও এয়ারলাইনের সঙ্গে কথা বলেন। 

হাইকমিশন কর্তৃক সংগৃহীত ভিডিওতে দেখা যায় যে, মৃত শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে মসজিদের ব্যালকনি থেকে নদীতে লাফ দেন। সেখানে বহু মানুষ, এমনকি সারাওয়াক স্টেটের পুলিশও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি কেউ তাঁকে বাঁচানোর জন্য দৃশ্যমান চেষ্টা করেননি।

হাইকমিশনের দাবি, মৃত ইরফানের পরিবারের পক্ষে তাঁর পিতা মো. ইসমাইলের স্বাক্ষরে লাশের ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী তদন্ত না করার জন্য একটি লিখিত আবেদন বাংলাদেশ পুলিশের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার সহায়তায় ঢাকা থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিশনে পাঠানো হয়। নিহতের বোন ই-মেইলে সরাসরি হাইকমিশনার বরাবর একই অনুরোধ করেন। 

নিহতের লাশ দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ অনেকে ফোনে অনুরোধ করতে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের আবেগ এবং লিখিত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত না করে লাশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয় এবং যথারীতি মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য টিকিট করাসহ সমস্ত আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। 

মরদেহ দেশে পাঠানোর সকল আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে মৃত্যুর ঘটনাকে তদন্ত করে দেখার কথা বলা হয়। ইতিমধ্যে লাশ প্রেরণের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ায় লাশ উড়োজাহাজ থেকে ফেরত এনে ময়নাতদন্তের সুযোগ ছিল না। হাইকমিশন থেকে মৃতের পরিবারকে প্রয়োজনে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর লাশের ময়নাতদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মৌখিকভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে প্রয়োজনে তদন্তের জন্য মালয়েশিয়া পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা যায়। 

হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উক্ত শিক্ষার্থী কয়েক মাস ধরে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন, বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। তিনি পরিবারকে এর আগেও নিজের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানান। তাঁর এমন অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত ছিলেন। কিন্তু কেউই তাকে এ মানসিক অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি। শিক্ষার্থীর মানসিক অস্থিরতা জানার পরেও এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকমিশনের কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি। 

হাইকমিশন বলছে, পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে তদন্তের কথা বলায় মিশন মৃত্যুর ঘটনাটি পুনরায় তদন্তের জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বাকী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ একসঙ্গে : শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha বাকী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ একসঙ্গে : শিক্ষা উপদেষ্টা আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027730464935303