মাদকসেবীদের দখলে মুজিবনগরের রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মদ, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজাসেবীদের দখলে কোটি টাকার একাডেমিক ভবনটি। মামলা জটিলতায় স্কুলটি চালু না হওয়ায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে ভবনটির কক্ষগুলো। চুরি হয়েছে দামি আসবাবপত্র, খসে পড়ছে ইট, দরজা ও জানালার গ্রিলগুলো। তা হারিয়েছে অনেক আগেই।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিবনগরের রশিকপুর গ্রামে ৩ বিঘারও বেশি জমির উপর নির্মাণ করে দ্বিতলবিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন। বিদ্যালয়টির নাম দেয়া হয় রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বছর দেশে ৫৪টি বিদ্যালয় একই প্রজেক্টের আওতায় নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৫৩টি বিদ্যালয় চালু হয়। কিন্তু রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া একটি গ্রাম। সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গার নাটুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভৈরব নদী পার হয়ে ৪ কিলোমিটার পর মুজিবনগরের বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩ কিলোমিটার দূরে টেংরামারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দূর হলেও সেগুলোতেই রশিকপুর গ্রামের বাচ্চারা পড়াশোনা করে। অথচ নিজ গ্রামেই দ্বিতল ভবনের একটি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ হলেও এখনো চালু হয়নি। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা সম্পদ। হয়ে উঠেছে মাদকের অভয়াশ্রম।
মুজিবনগর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির জন্য রশিকপুর গ্রামের সুলতান শেখ তার স্ত্রী আম্মাতন নেছা ৩ বিঘা ৫ কাঠা, আমির শেখ ১০ কাঠা এবং রতন শেখ ১০ কাঠা জমি দান করেন। জমিদানকারীদের মধ্যে আম্মাতন নেছা দাবি করেন, ৩ বিঘা জমির পরিবর্তে তাকে মাঠে ৫ বিঘা জমি দিতে হবে। দাবি অনুযায়ী কথাবার্তাও পাকা হয় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে। কিন্তু সেই জমি না দেয়ায় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে জেলা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। বিদ্যালয়টি চালুর জন্য সব নথিপত্রসহ সে সময়কার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়টি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।

রশিকপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলী খান জানান, পাঠদান শুরুর যাবতীয় উপকরণ এ ভবনে এক সময় ছিল। বিদ্যালয়ের সামনে আজও রয়েছে একটি বড় খেলার মাঠ। অথচ ২০ বছর পেরোলেও বিদ্যালয়টি চালু হয়নি। প্রতিনিয়তই মাদকের আখড়া বসে সেখানে। অবকাঠামো সব দিনে দিনে নষ্টের পথে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ পালু বলেন, শুনেছি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে মাদকের আখড়া বসে। আমরা পুলিশকে মাঝে মধ্যেই জানাই। পুলিশ এসে অভিযানও করে, তবে পুলিশ চলে গেলে আবারো তারা বসে। তারা উশৃঙ্খল, কিছু বলতে গেলেই তেড়ে আসে।

মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদি রাসেল জানান, আমরা মাঝে মধ্যেই সেখানে অভিযান চালাই। আমাদের আসার বিষয়টি টের পেয়ে যায় এবং পালিয়ে যায়। আমরা ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে এলাকাটি মাদকমুক্ত করার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস জানান, শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের সব কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই বিদ্যালয়টি চালু করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি - dainik shiksha মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর - dainik shiksha গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত - dainik shiksha সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024440288543701