মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা শিক্ষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা। এ লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেন। ঘটনার তদন্তে সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রণালয়।

এমন কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা সাত কর্ম দিবসের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে।

এতে বলা হয় ডা. ফাতেমা দোজা ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অনুষ্ঠেয় ‘রেডিওলজি সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকার (আরএসএনএ)’ ১০৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে জমা দেন। আমন্ত্রণপত্রে ওই সভায় অংশগ্রহণের যাবতীয় ব্যয়ভার আরএসএনএ বহন করবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সংস্থার মূল আমন্ত্রণপত্রে এমন কোনো তথ্য ছিল না। বরং সেখানে বলা হয়েছে সব ব্যয় ডা. ফাতেমা দোজাকেই বহন করতে হবে।

 

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সত্যতা যাচাইয়ে ২৭ নভেম্বর আয়োজক সংস্থার কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে সংস্থাটি জানায় ডা. ফাতেমা আমন্ত্রণপত্রের বিষয়বস্তু পরিবর্তন করেছে। তারা জানিয়েছে আয়োজক সংস্থা কোনো প্রকার ব্যয়ভার বহন করবে না। ডা. ফাতেমা দোজার অংশগ্রহণে যাতায়াত, আবাসন এবং খাওয়া দাওয়া বাবদ সব ব্যয়ভার নিজেকেই বহন করতে হবে মর্মে আরএসএনএ আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে উপ-সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা দেশের বাইরে সেমিনার, কনফারেন্স, ট্রেনিংয়ের মতো অনেক প্রোগ্রামে নিয়মিত যান। অনেককে দেখা যায় একটি প্রোগ্রাম শেষ করে আসার দুই তিন মাসের মধ্যেই আবার যান। তখন স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সন্দেহ হয়। সে কারণেই ক্রস চেক করা হয়। তাছাড়া বিদেশি অর্থায়ন না হলে অনেকে অংশ নেন না এমন নজিরও আছে। নিজের অর্থায়নে কেউ গেলে বাধা দেয়া হয় না। মূলত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ক্রস চেক করতে গিয়েই ডা. ফাতেমার কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে। তবে তিনি কেন মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন, তার জবাব এখনো দেননি। তিনি আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা সাত কর্ম দিবসের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নিয়মবহির্ভূতভাবে গত ১০ বছর যাবত ডা. ফাতেমা সরকারি চাকরিতে বহাল আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় পদোন্নতি ছাড়াও সরকারি সব সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এসব অভিযোগের তদন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলমান রয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ডা. ফাতেমা দোজা ‘বাংলাদেশ রেডিওলজি অ্যান্ড ইমাজিং সাসাইটি’র আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। এমন পদে থেকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন এবং কার্যক্রমকে বিতর্কিত করেছেন জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এমন কোনো ঘটনার কথা এখনো শোনেননি। বিষয়টি যদি হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে হয়ে থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। যা শুনলাম এমনটা হয়ে থাকলে তিনি ঠিক করেননি। আর ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

ডা. ফাতেমা দোজা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়ায় হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীনের স্বাক্ষর নিয়ে আমন্ত্রণপত্রের কপি সংবলিত একটি চিঠি অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিচালক মীর জামাল উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, তিনি আমার কাছেও আমন্ত্রণপত্রের পরিমার্জিত কপিতে স্বাক্ষর নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। সঠিক তথ্য গোপন করেছেন। যা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ধরা পড়েছে। এটা স্বীকার করতেই হবে তিনি ভুল করেছেন। এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এটি যাচাই করার দায়িত্বও হাসপাতালের নয়। এখন মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিতে বললে হাসপাতালের পক্ষ থেকে করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক যুগান্তরকে জানিয়েছে ডা. ফাতেমা দোজা ‘বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) রেডিওলজি অ্যান্ড ইমাজিং ফ্যাকালটির সদস্য সচিব। কিন্তু তিনি এফসিপিএস এবং এমসিপিএস রেডিওলজি ও ইমেজিং কোর্সের পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতা বলে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, বাছাই, লিখিত পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণ এবং মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের কাজ অভিজ্ঞ এবং সিনিয়রদের বাদ দিয়ে করে যাচ্ছেন। এ কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক এবং বিসিপিএস কর্মরতদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ডা. ফাতেমা দোজার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করা ও খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041239261627197