মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ চান শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার সাভারের মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোহসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তার দুর্নীতির তদন্ত ও তাকে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। এর অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠিয়েছেন। 

মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজে। ছবি : দৈনিক শিক্ষা

শিক্ষকদের অভিযোগ, একসময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় মোহসিন এক দশক আগে জার্সি বদলে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়ে অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আজমকে ‘ল্যাং মেরে’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেও এখনো ভারমুক্ত হতে পারেননি।  

অভিযোগে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ৫ এপ্রিল মিথ্যা ভার্চুয়াল সভা দেখিয়ে গোপনে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল মালেক খানকে মনোনয়ন দেন। সে রেজুলেশন করে কতিপয় শিক্ষককে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে অভিযোগে বলা হয়েছে, এ ধরনের কোন ভার্চুয়াল মিটিং কলেজের শিক্ষকদের সাথে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ওই শিক্ষককে শিক্ষকরা নির্বাচিত করেননি। তারা শিক্ষক সভার মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রকৃত শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনয়নের অনুরোধ করেছেন।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

অভিযোগ উঠেছে, সরকার ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দিলেও তিনি শিক্ষার্থীদের ৬৫ হাজার টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। রশিদ বইয়ের মাধ্যমে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে রশিদের কলেজ অংশে কম এবং ছাত্র অংশে তাদের দেয়া টাকা উল্লেখ করে বাড়তি টাকা নিজের পকেটে নেন। তিনি কলেজে আয় মনিটরিং নিজেই করেন। ছাত্র ভর্তি ফরম পূরণ ও উন্নয়নের নামে প্রতি বছর বিপুল পরিমানের টাকা কামিয়ে নেন। তিনি প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে অধিক খরচ দেখিয়ে নিজেই সব উন্নয়ন কাজ করেন। কলেজের হিসেব দেখার কেউ নেই। কোনো অডিট কমিটি না থাকায় অডিট হয় না। এজন্য তিনি ইচ্ছে মতো খরচ করতে পারেন। কলেজের সব কাজকর্ম তিনি সব শিক্ষককে পাশ কাটিয়ে গোপনে একা করে থাকেন। 

শিক্ষকরা অভিযোগে আরও বলেন, কলেজের বোর্ড পরীক্ষার ফল তুলনামূলকভাবে সাভারের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। কারণ সব শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে ও মতামতকে অগ্রাহ্য করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেন এবং বাড়ি থেকে ডেকে এনে অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেন তিনি। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, কলেজের টাকায় কলেজের পুকুরে মাছ চাষ হলেও সেই মাছ কোথায় যায় তা কেউ বলতে পারেন না। পুকুরের মাছ এবং গাছের ফল আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজ পরিচালনার স্বার্থে শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন কমিটি থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা উপেক্ষিত। পকেট কমিটি দেখিয়ে তিনি তার অবৈধ কাজ বৈধ করেন। কলেজের সব সিদ্ধান্ত ও আয়-ব্যয় তিনি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যদিকে করোনাকালে তিনি একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। এই টাকা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় ও শিক্ষকরা প্রাপ্য হলেও কাউকেই দেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিদিন কলেজের টাকায় ভাড়া গাড়িতে করে কলেজে আসা যাওয়া করে থাকেন।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

শিক্ষকদের অভিযোগ, গত ৩ নভেম্বর শিক্ষা অধিদপ্তরের টিম পরিদর্শনে গেলে সব শিক্ষকদের আড়ালে রেখে তিনি তা ফেস করেন এবং কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। এজন্য তিনি খরচের বিল করেন।  শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দেয়া হয়ে থাকে এবং সেই টাকা তার পকেটে যায়। টিসি নিয়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকেন তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি বারো থেকে পনের হাজার টাকা নেয়া হলেও কলেজ ফান্ডে নামমাত্র টাকা জমা দেয়া হয়ে থাকে। তিনি নিয়মের তোয়াক্কা না করে সব শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড কলেজ প্রদত্ত বাড়ি ভাড়ার ওপর প্রদান করেন। সেখান থেকে তিনি দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। কারণ তার সরকার প্রদত্ত মূল বেতন অন্যান্য শিক্ষকদের সমান হলেও বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা অন্য শিক্ষকদের চেয়ে দ্বিগুণ বাড়ি ভাড়ার ওপর প্রভিডেন্ড ফান্ড নিচ্ছেন।

শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, প্রতি বছর শিক্ষক বেতন (ইনক্রিমেন্ট) বৃদ্ধির কথা থাকলেও অব্যবস্থাপনার কারণে কলেজের ফান্ড শূন্য। শিক্ষক বা কর্মচারীদের বেতন দিতে ব্যর্থ। শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কলেজের আপদকালীন ফিক্সড ডিপোজিট পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে কয়েক কোটি টাকা ফান্ড থাকার কথা। ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য কেউ অবগত নয়।

অভিযোগ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যক্ষ মো. মোহসিন দাবি করেন, সব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। তিনি গভর্নিং বডির সভাপতি, সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সব ডকুমেন্টস দেখিয়েছেন। তিনি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন অধ্যক্ষ।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057680606842041