মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির আবেদন আর নয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আর সরকারি তালিকাভুক্ত বা গেজেটভুক্ত হওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্তির আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। শনিবার (২ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আজিজুল পারভেজ ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গত ১ অক্টোবর জামুকার সর্বশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই একই সভায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৬১ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্তিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ৫১ জনকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

ওই সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯-এর পর শুধু বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার আবেদন ছাড়া অন্য কোনো ক্যাটাগরির নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

এসব সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জামুকার মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন  বলেন, “বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন উপকমিটির যাচাই-বাছাইয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাকচ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবেদনকারীদের দাবির সত্যতা পাওয়া যায় না। ফলে এ নিয়ে যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে সময় এবং অর্থের অপচয় হয়। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি যেহেতু দেরিতে শুরু হয়েছে, তাই বাস্তবতার নিরিখে বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে প্রেরিত ‘ক’ তালিকায় যাঁদের মুজিবনগর, স্বাস্থ্যকর্মী ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে সুপারিশ রয়েছে তাঁদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপকমিটিতে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পর ১ অক্টোবরের জামুকার ওই সভায় মুজিবনগর সরকারের ৩২ জন কর্মচারী, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিক্যাল টিমের ৯ জন ডাক্তার ও নার্স, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী ও মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১১ জনসহ ৯ জন প্রবাসীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়।

জামুকার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, ‘একদিক দিয়ে সিদ্ধান্তটি ঠিকই আছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর হয়েছে। সরকার অনেকবার তালিকাভুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। তারপর আর কেউ বাকি থাকার কথা না। তবে কেউ যদি কোনো অভিমানে এত দিন তালিকাভুক্ত না হন কিংবা প্রয়োজন মনে না করেন, এ রকম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কেউ যদি কখনো তালিকাভুক্ত হতে চান তাঁর সেই সুযোগ রাখা উচিত।’

এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য তো কেউ বসেছিল না। জীবন-জীবিকার তাগিদে কেউ হয়তো নিজের পেশায় ব্যস্ত আছেন, কেউ হয়তো বিদেশে চলে গেছেন, তিনি যদি এসে তালিকাভুক্ত হতে চান, তাঁর যদি উপযুক্ত প্রমাণ, কাগজপত্র থাকে, তবে তো তাঁকে বাদ দেওয়া যাবে না।’

দেশে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। যাঁরা নিয়মিত রাষ্ট্রীয় সম্মানি ভাতা পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য ২০১৭ সালে উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যায়ে যে যাচাই-বাছাই হয় তাতে ২৬ হাজার ৯৪২ জনকে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ পুনরায় যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। আর যাঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তাঁদের আপিলও নিষ্পত্তির পর্যায়ে।

তালিকাভুক্ত না হলে মুক্তিযোদ্ধারা সরকার প্রদত্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা, ঈদ বোনাস, আবাসন, চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। মারা গেলে পান রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের সম্মান। সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে পান কোটা সুবিধা। খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা পান আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা। ফলে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য তৈরি হয় ব্যাপক আগ্রহ।

অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা বহুকাল মুক্তিযোদ্ধার সনদ কিংবা সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি, তাঁরাও পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি অনেকে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র সংগ্রহ করে, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে। মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীর সংখ্যা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নানা বিতর্ক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052850246429443