দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামলাল আনন্দ কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক জি এন সাইবাবাকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দেশটিতে নিষিদ্ধঘোষিত মাওবাদীদের সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে তার। সহযোগীদের নিয়ে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’ করেছেন তিনি। এ কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য নানা নাটকীয়তার পর উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে সাইবাবাসহ ছয়জনকেই বেকসুর মুক্তি দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিচারপতি বিনয় জি জোশী ও বিচারপতি বাল্মীকি এসএ মেনেজেসের সমন্বয়ে গঠিত বোম্বে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ওই এ মামলা তাদের অব্যাহতি দেন।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হেম মিশ্র ও সাংবাদিক প্রশান্ত রাহিকে মাওবাদী যোগের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সেই সূত্র ধরে ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্র পুলিশ গ্রেফতার করে সাইবাবাকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, আলোচিত ওই মামলায় গড়চিরোলি জেলা দায়রা আদালত ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সাইবাবা ছাড়াও জেএনইউর ছাত্র হেম মিশ্র, সাংবাদিক প্রশান্ত রাহি, পা-ু নারোতে এবং মহেশ তিরকিকেও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। আদালত তিরকিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল এবং সাইবাবাসহ বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সাইবাবাকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এর মধ্যে অবশ্য চলতে থাকে তাদের আইনি লড়াই। নাগপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায়ই চলাচলের ক্ষমতা হারান তিনি। কারাগারের মধ্যে চলাচল করতেন হুইলচেয়ারেই। সে সময় বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালে বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ তাকে মাওবাদী যোগের অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়েছিল। কিন্তু তার এক দিন পরই সুপ্রিম কোর্ট তা স্থগিত করে। ফলে আবারও গ্রেপ্তার হন তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বিচারপতি বিনয় জি জোশী ও বিচারপতি বাল্মীকি এসএ মেনেজেসের সমন্বয়ে গঠিত বোম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে শুনানি শেষ করেছিল। গতকাল সেই শুনানির রায় হয়েছে। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে সাইবাবাসহ ছয়জনকেই বেকসুর মুক্তি দিয়েছে আদালত।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মহারাষ্ট্রে নকশালবিরোধী অভিযানের ইন্সপেক্টর জেনারেল সন্দীপ পাতিল বলেছেন, সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে। অন্যদিকে সাইবাবার স্ত্রী বসন্ত জিএন হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া জুড়ে সাইবাবাকে সমর্থন করা ব্যক্তি ও মানবাধিকারকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।