মুখস্থবিদ্যাধারীদের নয়, মেধাবী চাকরিপ্রার্থী চায় কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, মুখস্থবিদ্যাধারীদের নয়, মেধাবী চাকরিপ্রার্থী চায় কমিশন। দেশ মেধাবীদের চায়, মুখস্তবিদ্যাধারীদের নয়। চাকরির বয়স বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লেখাপড়া শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে যারা চাকরির চেষ্টা করে তারা এগিয়ে থাকে। যতই বয়স বাড়তে থাকে ততই মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৈনিক শিক্ষাডটকমের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। 

এদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো না বাড়ানোর আন্দোলন ও দাবি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেছে, ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীরাই চাকরিতে প্রবেশ করছে বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটাই চাকরির গোল্ডেন এজ বা সোনালি সময়।

গত এক দশক ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন চললেও সরকার তাতে সম্মতি দেয়নি। সরকারের ভেতরেও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ অবস্থায় পিএসসির গোল্ডেন এজের তথ্য সরকারকে কড়া অবস্থান নিতে সহায়তা করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ। বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বর্তমানে স্বদেশি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আল আমিন রাজুর মতে,  ‘যদি মেধা যোগ্যতা থাকে তাহলে কেন ৩০ এর মধ্যে আটকে রাখা। আমি চাকরি পাব কি পাব না সেই জায়গাতেই যেতে দিচ্ছেন না। অন্য দেশে ৩৫, ৪০ এমনকি ৪৫ বছর বয়সেও চাকরিতে ঢুকছে। মেধাবীদের যেকোনো বয়সেই চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ উন্মুক্ত রাখতে হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, চাকরি ক্ষেত্রে নতুনদের মধ্যে একজনের বয়স ২২ আর একজনের বয়স ৩৫ হলে সেটা নানা সমস্যা সৃষ্টি করবে। চাকরিতে ঢুকে প্রথমে শিখতে হয়। তাদের বিভিন্ন দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। কমবয়সীদের শেখার ক্ষমতা বেশি। ৩০ এর পর শেখার ক্ষমতা কমে যায়। আর কর্মক্ষেত্রেও কম বা বেশি বয়সীদের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এ কারণে সরকার যখন মাঠপর্যায়ে পোস্টিং দেয় তখন কাছাকাছি বয়সের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়।

পিএসসি গত বৃহস্পতিবার ৪০তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করেছে। এর আগে যে সাধারণ বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ করেছে তা হচ্ছে ৩৮তম। এই বিসিএসের ফল বিশ্লেষণ করে পিএসসি বলেছে, ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা এ বিসিএসে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ সুপারিশ পেয়েছেন। এরপরই রয়েছেন ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীরা। তারা ৩২ দশমিক ৭১ শতাংশ সুপারিশ পেয়েছেন। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ সুপারিশ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। এরপরের অবস্থানে রয়েছেন বিগিনাররা বা যারা নতুন চাকরি খুঁজছেন তারা। ২১ থেকে ২৩ বছর বয়সীরা অর্থাৎ চাকরির বাজারে নতুন এ প্রার্থীরা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ সুপারিশ পেয়েছেন। ২৯-এর ঊর্ধ্বের প্রার্থীরা মাত্র ২ দশমিক ৪১ শতাংশ সুপারিশ পেয়েছেন। 

নারী চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান কেমন জানতে চাইলে পিএসসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নারী প্রার্থীরাও এ বয়সে এগিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীরা সুপারিশে এগিয়ে রয়েছেন। ৩৮ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের প্রায় ২৭ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশের বয়স ২৩ থেকে ২৫ বছর।

২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা চূড়ান্ত সুপারিশে এগিয়ে থাকলেও প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এসব পরীক্ষায় ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীরা এগিয়ে থাকে। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ ৩৬ দশমিক ৩২ শতাংশই এই শ্রেণির। লিখিত পরীক্ষায়ও তারাই এগিয়ে থাকে। ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রার্থী ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সী। প্রিলিমিনারি বা লিখিত পরীক্ষার মতো আবেদনেও এগিয়ে থাকেন এ বয়সী প্রার্থীরা। ৩৮তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪০ জন। তাদের মধ্যে ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রার্থী ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সী।

২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা কেন এগিয়ে থাকে জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য বলেন, এ সময় তারা লেখাপড়ার মধ্যেই থাকে। ছয় বছর বয়সে স্কুল শুরু করলে ১১ বছরে প্রাথমিক শেষ হবে। ১৬তে মাধ্যমিক, ১৮তে উচ্চমাধ্যমিক এবং ২২ বছর বয়সে সম্মান শেষ হয়। এ সময় চাকরির আবেদন করলে তা পূর্ণতা পেতে পেতে মাস্টার্স শেষ হবে। এ প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাপ পড়ছে না। মেধাবীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক বা দুবারের চেষ্টাতেই বিসিএসে সুপারিশ পেয়ে যায়। ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সেই মানুষ সবচেয়ে সাহসী ও উদ্যোমী থাকে।

বিসিএসে আবেদন করা যায় ২১ বছর বয়সেই। ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির জন্য আবেদনের সুযোগ থাকে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আরও দুই বছর আবেদন করার সুযোগ পান।

বাংলাদেশে প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন ২৬ লাখ তরুণ। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ লাখ তরুণের চাকরির সংস্থান হয়, বাকিরা বেকার থাকেন। বাংলাদেশের সরকারি খাত সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ বেকারের কর্মসংস্থানে সক্ষম। বাকি ৯৬ শতাংশ এখনো বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানা বা আত্মকর্মসংস্থানে জড়িত। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে সরকারি খাতে চাকরি আছে মাত্র ৩.৮, বেসরকারি খাতে ১৪.২, ব্যক্তি খাতে ৬০.৯ এবং অন্যান্য খাতে ২১.১ ভাগ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029098987579346